মানুষ শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দেয়নি বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘আগে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার দরকার।’
রোববার (১৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের শিল্পকলা একাডেমিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম আয়োজিত ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্র ভাবনা ও পুনর্বাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় তারা আহতদের যথাযথ পুনর্বাসনেরও দাবি জানান।
১৮ জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হন আগ্রাবাদ টিএন্ডটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদুল ইসলাম। ছাত্রলীগের হামলায় তার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা পা নিয়ে তিনি পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।
সভায় জুনায়েদ বলেন, ‘শহীদেরা শুধু একটি নির্বাচনের জন্য রক্ত দেয়নি। আমি হয়তো পড়ালেখা শেষে চাকরি পেতাম না। আহত-নিহতদের অনেকেই আমার মতো। তারপরও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য।’
আরও পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত কলেজ ছাত্র জাহিন জামানের বাবা মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পরিবারের যে সামর্থ্য ছিল, তার সব দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার ছেলে এখনও পঙ্গু। তার চিকিৎসা করার মতো টাকা আমাদের নেই। এ ক্ষেত্রে জাহিনের মতো সব আহতের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সরকারকে করতে হবে।’
জুলাই ও আগস্টের ভয়াল স্মৃতি স্মরণ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘৪ আগস্ট দুপুর থেকে একের পর এর গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে আসছিল। কিন্তু সে অনুপাতে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছিলাম না। ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা কখনো ভোলা যাবে না।’
‘ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে যখন আমি এক শিক্ষার্থীর মাথা থেকে বুলেট বের করছিলাম। তখন একসঙ্গে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এসব তরুণ যে জন্য নিজেদের রক্ত ঝরিয়েছে, সেই সংস্কার হওয়া চাই।’ যোগ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের পুনর্বাসনে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামে আহত মোট ৯০০ জনের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯৪ জনের তালিকা ভেরিফাই (যাচাই) করে কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে।’
আহতদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামে দুইজন চিকিৎসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘শহীদ ও আহতরা আমাদের সম্পদ। আমরা তাদের সামনে রেখেই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কাজ করবো। এ ক্ষেত্রে বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অবশ্যই দেশের মানুষের ইচ্ছা বুঝতে হবে।’
অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রিজাউর রহমান, জোবায়ের আল মালিক প্রমুখ।
এএজেড/ইএ/এমএস