রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় শিক্ষক ও তিন কর্মকর্তার রুমে তালা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে এসব রুমে তালা দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ এনে তাদের বিচার দাবি এবং ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কমিটির নেতারা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্যোগে এসব রুমে তালা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিন প্রাথমিকভাবে আরও বেশি সংখ্যক কক্ষে তালা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও উপস্থিত নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের পর সর্বসম্মতিক্রমে ছয় শিক্ষক ও তিন কর্মকর্তার কক্ষে তালা দেওয়া হয়।
যেসব শিক্ষকের রুমে তালা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মাহাত, এন্টোমলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়েশা আক্তার, অ্যাগ্রো ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন ও অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন আহমদ, সয়েল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল। কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগের মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের আলিউল আলম টুয়েল, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সোনিয়া নুসরিন সুমি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন, ‘প্রশাসন বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ করলেও কিছু দোষীর বিরুদ্ধে যে মাত্রায় বিচার হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। তারা ক্যাম্পাস ও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাপস ও সম্পাদক আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বিএম আলমগীর কবির বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা একত্রে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে লাঠি মিছিল করেছিলেন। এর সুষ্ঠু বিচার আমরা পাইনি। এই প্রেক্ষাপটে আমরা এর প্রতিবাদ করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের সভাপতি আহমেদুল কবির তাপসকে কল দেওয়া হলেও তিনি দলীয় প্রোগ্রামে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে দুই ঘণ্টা পর কল দিতে বলেন। দুই ঘণ্টা পর আবার কল দিলেও তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। এক ঘণ্টা পর তাকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আরফান আলী বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও অধিকতর তদন্তের জন্য বর্তমানে সিন্ডিকেট অনুমোদিত আরেকটি তদন্ত কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তদন্ত চলমান অবস্থায় এ ধরনের কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য ইতিবাচক নয়। সবাইকে আইন নিজের হাতে না নিয়ে প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগেও ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র, উসকানি ও নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য পাওয়ার পর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টদের এসব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সতর্কতা জারি করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ধরনের এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাতে বলা হয়েছিল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ও উসকানি এবং নাশকতা কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় গোপন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
সাইদ আহম্মদ/ইএ/এমএস