ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশেই জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি জানান, আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা, কর্মপদ্ধতি ও কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নিজে জড়িত থেকে তিনি জেনেছেন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া মামুন সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাসিনা ও তার সরকারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন। জবানবন্দিতে তিনি আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত, নিহতদের পরিবার, দেশবাসী এবং আদালতের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
জবানবন্দি শেষে চৌধুরী আব্দুল্লাহকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, সুলতান মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের আদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে অনেককে আহত, নিহত করায় পুলিশ প্রধান হিসেবে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার জন্য অপরাধবোধ ও বিবেকের তাড়নায় আমি রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সাবেক আইজিপি আরও জানান, আমি গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে স্বজনহারাদের কান্না, আহজারি শুনেছি। ভিডিওতে নৃশংসতা দেখেছি, তাতে আমার রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে হয়েছে। বিশেষ করে হত্যার পরে লাশ একত্রিত করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার বিভৎসতা আমাকে মর্মাহত করেছে।
রাজসাক্ষী মামুন বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা। কিন্তু আমি চাইতাম, তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাত। এ ছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।’
সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। লেথাল উইপেন (মারণাস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিবির হারুন ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী।’
এফএইচ/এমএমকে/জেআইএম