রাজধানী ঢাকা উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মো. আলী হোসেন (৪৪) নামের এক ব্যক্তি গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ১৮৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া জেলার ৫৫ জনের নাম রয়েছে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নিহতের আত্মীয় মো. মফিজুল ইসলাম সানা ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট (উত্তরা পূর্ব) আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগের, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্চাসেবক লীগের আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে বগুড়া জেলার যারা রয়েছেন- বগুড়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান (মামলা নং ১৫), আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুর রহমান মিলন (মামলা নং ১৭), স্বেচ্চাসেবক লীগ নেতা মাহফুজুল ইসলাম রাজ (মামলা নং ২৪), আওয়ামী লীগ নেতা হাসান আলী আলাল (মামলা নং ২৭), সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম (মামলা নং ৩০), বিউটি বেগম (মামলা নং ৩৬), শাহজাদী আলম লিপি (মামলা নং ৫২), আকরাম হোসেন (মামলা নং ৫৫), আব্দুর রাজ্জাক (মামলা নং ৫৬), জিয়াউল হক (মামলা নং ৫৭), আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহফুজা খানম লিপি (মামলা নং ৫৮), আওয়ামী লীগ নেতা সারজিল আহম্মেদ টিপু (মামলা নং ৬০), সোনাতলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমান রানা (মামলা নং ৪৯), আওয়ামী লীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ সবুজ (মামলা নং ৬৪), যুবলীগ ক্যাডার মো. শামিম (মামলা নং ৭৩), সোনাতলা উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জাকির (মামলা নং ১২১), সোনাতলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম বুলু (মামলা নং ১২০) আওয়ামী লীগ নেতা মানিক সরকারসহ (মামলা নং ১২৬), সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু (মামলা নং৬১), মোস্তাফিজজুর রহমান (মামলা নং ৭০), মান্নান আকন্দ (মামলা নং ৭১), সুলতানা মাহমুদ খান (মামলা নং ৭৪), আবু সুফিয়ান (মামলা নং ১০৫), শুভাশীষ পোদ্দার লিটন (মামলা নং ১০৮), তৌফিকুর রহমান বাপ্পি (মামলা নং ১০৯), রাফি নেওয়াজ খান (মামলা নং ১১৬), সাজেদুর রহমান শাহীন (মামলা নং ১১৭) ও শাহ মো. আব্দুল হাকিমসহ প্রমুখ।
জানা যায়, শেখ হাসিনার ডাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতে এসব নেতাকর্মীরা রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অবস্থান করেছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী উত্তরার পূর্ব থানাধীন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে আজমপুরে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। ওই দিন শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যসরাও সেখানে অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র-জনতা সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। নেতাকর্মীরা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যসরা ছাত্র জনতার ওপর অর্তকিত গুলি চালাতে থাকে। এতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কাতারে থাকা আলী হুসেনকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তাহার পেট, বুক ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মহাসড়কের ওপরে পড়ে থাকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে কয়েকজন গিয়ে আলী হুসেনের হাত-পা ধরে তুলে নিয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার আলী হুসেনকে মৃত ঘোষণা করে।