গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেবেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা সাক্ষ্য দিতে না পারায় ট্রাইব্যুনাল নতুন করে আজকের দিন নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গাজী এমএইচ তামিম বলেন, এই মামলায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মাহমুদুর রহমান ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়ক নাহিদ ইসলামের। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা ওইদিন আসতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাওয়া হয়। পরে সময় মঞ্জুর করে নতুন আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই এই দুই সাক্ষী নিজেদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।
এর আগে, ৯ সেপ্টেম্বর ১৪তম দিনের মতো এ মামলায় ছয়জন সাক্ষ্য দেন। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মোট ৪৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনজন সাক্ষ্য দেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে অজানা অনেক তথ্য ট্রাইব্যুনালের সামনে এনেছেন।
সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন জবানবন্দি দেন ছয়জন। এর মধ্যে চিকিৎসক-সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এই মামলায় গত ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা অব্যাহত রয়েছে।
এফএইচ/কেএইচকে