শেখ হাসিনার লকারে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ছাড়াও আরও যা পাওয়া গেছে
গণহত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকারে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকারের সাথে পাওয়া গেছে সোনার বার, কয়েন, মুক্তা, হীরাসহ বিভিন্ন ধরনের দামি পাথর। মূল্যবান এসব পাথরের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। তিনটি লকার পরীক্ষা করে গতকাল বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সোনা পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা তিনটি লকার পুনঃযাচাই করতে আদালতের কাছে লকারগুলো খোলার আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লকার খোলার অনুমতি দেন। পরে গত মঙ্গলবার দুদক নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের একটি টিম লকার পরীক্ষা করতে যায়। এ দলে ছিলেন একজন বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দুদকের অনুসন্ধান তদারক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখা কর্তৃক মনোনীত একজন সোনা বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের কর গোয়েন্দা ও সিআইসি কর্তৃক মনোনীত দুজন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক কর্মকর্তারা। তাঁদের উপস্থিতিতে তিনটি লকার খোলা হয়। দুদক
গণহত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকারে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকারের সাথে পাওয়া গেছে সোনার বার, কয়েন, মুক্তা, হীরাসহ বিভিন্ন ধরনের দামি পাথর। মূল্যবান এসব পাথরের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। তিনটি লকার পরীক্ষা করে গতকাল বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সোনা পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা তিনটি লকার পুনঃযাচাই করতে আদালতের কাছে লকারগুলো খোলার আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লকার খোলার অনুমতি দেন।
পরে গত মঙ্গলবার দুদক নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের একটি টিম লকার পরীক্ষা করতে যায়। এ দলে ছিলেন একজন বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দুদকের অনুসন্ধান তদারক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখা কর্তৃক মনোনীত একজন সোনা বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের কর গোয়েন্দা ও সিআইসি কর্তৃক মনোনীত দুজন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক কর্মকর্তারা। তাঁদের উপস্থিতিতে তিনটি লকার খোলা হয়।
দুদক জানায়, শেখ হাসিনার নামে পূবালী ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল করপোরেট শাখায় একটি (লকার নম্বর–১২৮), শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের যৌথ নামে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির প্রিন্সিপাল শাখায় একটি (লকার নম্বর ৭৫১) এবং ব্যাংকটির একই শাখায় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার যৌথ নামে অপর একটি লকার (লকার নম্বর ৭৫৩) খোলা হয়। লকারগুলোতে পাওয়া মালামালের ইনভেন্টরি প্রস্তুতপূর্বক সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপকের জিম্মায় দেওয়া হয়।
দুদক আরো জানায়, শেখ হাসিনার নিজ নামে থাকা পূবালী ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল কর্পোরেট শাখার লকারটিতে একটি খালি পাটের ব্যাগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখায় শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের যৌথ নামে থাকা লকারটিতে আনুমানিক ৪ হাজার ৯২৩ দশমিক ৬০ গ্রাম বা ৪২২ দশমিক ২৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং একই শাখায় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার নামে থাকা যৌথ লকারে আনুমানিক ৪ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৫৬ গ্রাম বা ৪১০ দশমিক ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়; যা সব মিলিয়ে ৮৩২ ভরি সোনা।
দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দুটি লকারে রক্ষিত স্বর্ণালংকারের সঙ্গে বিভিন্ন চিরকুট ও বর্ণনা অনুযায়ী স্বর্ণালংকারসমূহ অভিযোগসংশ্লিষ্ট শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে রয়েছে। প্রতিটি গয়নায় আলাদা আলাদা চিরকুট ব্যবহার করা হয়েছে।
যৌথ লকারে থাকা স্বর্ণালংকারের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সোনা কতটুকু—জানতে চাইলে দুদক মহাপরিচালক বলেন, দুদক যেসব স্বর্ণালংকার পেয়েছে, তার প্রতিটিতে আলাদা নামে চিরকুট রয়েছে। এটা জানা সময়সাপেক্ষ। কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিজ নামে, তাঁর ছেলেমেয়ে এবং বোন ও বোনের ছেলের নামে কতটুকু সোনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এসব লকারের কথা উল্লেখ করেন। দুদক সম্প্রতি তাঁর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে কমিশনের অনুমোদনক্রমে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা লকার খোলার আবেদন করেন।
এদিকে অগ্রণী ব্যাংকের লকারে পাওয়া মূল্যবান এসব দামি পাথর ও স্বর্ণালংকার শেখ হাসিনার নামে থাকা লকার থেকে রাষ্ট্রীয় জিম্মায় ব্যাংকেরই অন্য একটি লকারে সিলগালা অবস্থায় রাখা হয়েছে। ‘অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার স্বর্ণালংকার’—এমন সংবাদ এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়, ব্যাংকপাড়াসহ অফিস-আদালত, যানবাহন, ফুটপাত সর্বত্র এখন আলোচনার মূল বিষয় এ স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, টানা সাড়ে ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার মুখে ‘রিক্ত আমি, সিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’—এমন বক্তব্য শত শতবার শুনেছেন। তিনি ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা, তাই সাধারণ জীবনযাপনই তার লক্ষ্য।’ দেশের কোথাও তার কোনো সম্পদ নেই। এমন শত শত উক্তি তিনি করেছেন। এখন যেসব সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাতে মাথায় আকাশ ভেঙেপড়ার মতো অবস্থা।
অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখারই এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শেখ হাসিনার কারণে এখন তাদের এ ব্যাংক আলোচনার শীর্ষে। একজন মানুষের কত সম্পদ প্রয়োজন, তা শেখ হাসিনার এ কর্মকাণ্ড না দেখলে বুঝতে পারতেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন যেসব উপহার সামগ্রী পেয়েছেন সেগুলো ব্যাংকের লকারে রেখেছেন। কিন্তু এসব উপহার সামগ্রী ব্যক্তিগত লকারে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যহার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মতো অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এটিকে আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
What's Your Reaction?