- যানজটের নিয়ন্ত্রণে পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ পৌরবাসীর
- পৌর কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বিত পদক্ষেপের পরামর্শ সচেতন নাগরিকদের
- ইজিবাইকের লাইসেন্স নবায়ন ও প্রদানে পৌরসভার আয় প্রায় কোটি টাকা
- শহরে ছোট-বড় ১৫ টি স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে ইজিবাইকের
তীব্র যানজটে নাকাল শেরপুর পৌর পৌরসভার বাসিন্দারা। যানজটের অন্যতম কারণ সড়কে বিশৃঙ্খলভাবে ইজিবাইকের চলাচল। সেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা ও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মিনি স্ট্যান্ড তৈরির ফলে পৌর শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। যানজটের নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ শহরবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার ইজিবাইক পৌর শহরে প্রবেশ করছে। আর এসব ইজি বাইকের বেশির ভাগই অনুমোদনহীন। চালকরাও অদক্ষ। নেই ট্রাফিক আইন মানার প্রবণতাও। আর হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। শহরে ইজিবাইকের ছোট-বড় ১৫টি স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এগুলো হলো খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর, রংমহল মোড়, শহীদ মাহবুব চত্বর (কলেজমোড়), নতুন বাসস্ট্যান্ড মোড়, নিউমার্কেট মোড়, নিউমার্কেট প্রথম গেইট, নিউমার্কেট দ্বিতীয় গেট, বটতলা মোড়, হাসপাতাল পুরাতন গেইট, হাসপাতাল নতুন গেইট, শহীদ স্কয়ার (থানার মোড়), মেঘনা মার্কেট, গোয়ালপট্টি মোড় ও ডিসি গেইট। শহরে অতিরিক্ত ইজি বাইক চলাচল করা ও যেখানে-সেখানে যাত্রী ও মালপত্র ওঠানামা এবং বিভিন্ন মোড়ে ইজি বাইকের মিনি স্ট্যান্ড বানানোর ফলে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও অতিরিক্ত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের রংমহল মোড় হতে তিনানী বাজার হয়ে শহীদ মাহবুব চত্বর পর্যন্ত প্রায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। আবার শহীদ মাহবুব চত্বর হতে খরমপুর, রঘুনাথ বাজার, নয়ানী বাজার, নিউমার্কেট যানজট নিয়মিত হয়ে গেছে। যা সকাল ৯টার পর হতে শুরু হয়, মাঝেমধ্যে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতেও লেগে থাকে যানজট। প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক যেনো ভোগান্তির আখড়া। শাপলা চত্বর মোড়, শহীদ মাহবুব চত্বর, নয়ানী বাজার মোড় ও নিউমার্কেট মোড়ে প্রায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। তিনানী বাজার হতে শহীদ স্কয়ার পর্যন্ত, শহীদ মাহবুব চত্বর হতে নয়ানী বাজার, মুন্সি বাজার, তেরা বাজার, গোয়ালপট্টির সড়কের দুই পাশে নেই কোনো গাড়ি পার্কিং বা রাখার মতো জায়গা। তাই ক্রেতা, বিক্রেতা, পথিকরা নিজেদের মোটরসাইকেল বা ইজিবাইক চালকরা তাদের গাড়ি সড়কের তিন চার ফিট দখলে রাখে। সড়কের জায়গায় গড়ে উঠা ভাসমান দোকানের কারণে নয়ানী বাজারের কাঁচা বাজারের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলায় দায়। এসব কারণে যানজট তীব্র আকারে সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন
বেহাল সড়কে ভোগান্তি চরমে
বগুড়ায় ইজিবাইক ও মোটা চাকার অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
শহরের সজবরখিলা মহল্লার বাসিন্দা আবুল হাকিম জানান, ‘রঙমহল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত যেতে সময় লাগে আধাঘণ্টা। অথচ এক কিলোমিটারের কম এ রাস্তাটুকু যাতায়াতে সময় লাগার কথা ১০ মিনিট। এতো অটোরিকশা, তারপর আবার সড়কের পাশে মোটরসাইকেল রাখা, ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান, এসব কারণে যানজট বাড়ছে। যানজটে সময়ের অপচয় হচ্ছে।’
নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা তাশরিফ হোসাইন জানান, শহরে জনসংখ্যার তুলনায় ইজিবাইকের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। প্রতিটি ইজিবাইক একজন বা দুজন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। এ ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার জন্য যানজট লেগে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবাসসুম আক্তার অনন্যা জানান, ‘স্কুলে যাওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে বের হতে হয়। যানজটের কারণে অনেক সময় ক্লাসে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। বিশেষ করে খরমপুরে বেশি জ্যাম হয়। এখানে ট্রাফিকও থাকে না। বছরের পর বছর এ ভোগান্তি আমরা পোহাচ্ছি। অথচ পৌরসভা লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়নের জন্য প্রায় কোটি টাকা পাচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা ও নাগরিকদের নিয়ে আলোচনা কোনো কিছুও তারা করছেনা।’
খরমপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভার যে পরিমাণ ইজিবাইক থাকার প্রয়োজন তার চেয়ে ইউনিয়ন হতে আসা গাড়ি অনেক বেশি হয়ে গেছে। বাইরের গাড়িগুলো শহরে প্রবেশ করলে যানজট ব্যাপক আকার হয়ে যায়। যানজটের কারণে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’
শহরের মোবারকপুর মহল্লার বাসিন্দা অ্যাম্বুল্যান্স চালক মানিক মিয়া বলেন, ‘জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে এমন রোগী আমরা ময়মনসিংহ বা ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু সাইরেন বাজালেও ইজিবাইক সরে না। যানজটে আটকে থাকতে হয়।’
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারণ্যর সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, ‘অদক্ষ চালকের বেপরোয়া চলাচলের কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়া ফুটপাত দখল করে হকাররা বিভিন্ন দোকানপাট বসানোর কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে শব্দদূষণ ও যানজটের। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আমাদের সংগঠনের ছেলেমেয়েরা যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু পৌরসভার বাইরে থেকে আসা প্রায় ছয় সাত হাজার অটোরিকশা এ শহরে বহন করা সম্ভব না।’
শেরপুর সম্মিলিত নাগরিক ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিহাদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পৌরসভার গলার কাঁটা এখন অটোরিকশা। এসব অবৈধ অটোরিকশার লাইসেন্স দিতে গিয়ে পৌরসভা বিপুল পরিমাণ টাকা পান। এরপরও এসব ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নেই উদ্যোগ। নাম মাত্র মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও নেই স্থায়ী কোন সমাধানের বাণী।’
এ বিষয়ে শেরপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু লায়েস বজলুল করিম জাগো নিউজকে জানান, ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে ইউনিয়ন পরিষদ হতে বিপুল সংখ্যক ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে যানজট বাড়াচ্ছে। আমরা পৌরসভায় ২ হাজার ৯০০ ইজিবাইকে লাইসেন্স দিচ্ছি। আর পৌরসভার পক্ষ হতে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করা হচ্ছে।’
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইদুল আলম জগো নিউজকে বলেন, ‘অতিরিক্ত ইজিবাইক সড়কে যুক্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সুধী সমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।’
নাঈম ইসলাম/আরএইচ/জেআইএম