ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দিনের মতো ফলাফল প্রকাশের পর বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর)-ও দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়েছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
এর আগের ডাকসু নির্বাচনের দিন মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। তবে প্রধান ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই বাজারে ঢালাও দরপতন দেখা দেয়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ধরা অব্যাহত থাকে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
ডাকসু নির্বাচনের দিন ও ফলাফলের পর শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হলেও, এই দরপতনের পেছনে ডাকসু নির্বাচনের কোনো প্রভাব নেই বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এখন মূল্য সংশোধন হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক দরপতন। এমন উত্থান-পতনের মধ্যদিয়েই শেয়ারবাজার এগিয়ে যাবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। কিন্তু আধাঘণ্টার মধ্যে দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশি প্রতিষ্ঠান। আর লেনদেনের শেষদিকে সব খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দামে পতন হয়। ফলে ঢালাও দরপতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ২০টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৭৬টির দাম কমেছে এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ১১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৬৮টির দাম কমেছে এবং ২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৯টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২১টির দাম কমেছে এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ৯ কার্যদিবস পর ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।
টানা দরপতনের সঙ্গে লেনদেনের গতি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, টানা উত্থানের পর কিছুটা মূল্য সংশোধন হবে এটা স্বাভাবিক। ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে শেয়ারবাজারের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। কারণ শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডারদের বড় অংশই বিএনপিপন্থি। যাইহোক এই দরপতন দীর্ঘ হবে না বলে আশা করছি।
ডাকসু নির্বাচনের দিন ও ফলাফলের পর টানা দুই কার্যদিবস বড় দরপতন হলেও শেয়ারবাজারে ডাকসু নির্বাচনের কোনো প্রভাব নেই বলে জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে ডাকসু নির্বাচনের কোনো প্রভাব নেই। দু’দিনের যে দরপতন, তা স্বাভাবিক। টানা বেশ কিছুদিন শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তার ফলে এখন কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে কখনো দাম বাড়বে, আবার দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। টানা দাম বাড়া বা টানা দাম কমা স্বাভাবিক লক্ষণ না। আমরা আশা করি উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই শেয়ারবাজার সামনে এগিয়ে যাবে।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে রবি’র শেয়ার। কোম্পানিটির ৪২ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। ৩১ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, ই-জেনারেশন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইনটেক লিমিটেড এবং সিটি ব্যাংক।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৫০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৬টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএস