বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শোক জানাতে গিয়ে অন্য অনেক নাগরিকের মতো মো. আজিজুর রহমান নামে এক রিকশাচালকও মব সন্ত্রাসের শিকার হয়। তারপর তাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এ ঘটনা সরকারের নিজস্ব নীতির বরখেলাপ বলে মনে করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
রোববার (১৭ আগস্ট) আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, শোক জানাতে আসা একজন সাধারণ রিকশাচালককে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখানো সরকারের নিজস্ব ঘোষিত নীতি ও নাগরিকের প্রতি অঙ্গীকারেরও ঘোরতর বরখেলাপ বলে মনে করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
আরও পড়ুন:
- ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার সেই রিকশাচালকের জামিন
- হাসিনাকে ফেরাতে আসিনি, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি
- ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার অনেকে
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মব সন্ত্রাসীরা ১৪ আগস্ট রাত থেকেই ৩২ নম্বরে অবস্থান নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত ফোন তল্লাশি এবং জিজ্ঞাবাদের নামে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে থাকে এবং বাধাহীনভাবে ১৫ আগস্ট সারাদিন যা অব্যাহত রাখে। এ ধরনের বেআইনি তৎপরতায় লাঞ্ছনার শিকার হতে দেখা গেছে নারী-পুরুষ অনেককে। এর মধ্যে শোক জানাতে আসা রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে মারধর করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের হাতে তুলে দেয় মব সন্ত্রাসীরা।
এতে বলা হয়, আশ্চর্যজনকভাবে, ধানমন্ডি থানায় পূর্বে দায়েরকৃত জুলাই ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ‘সন্দিগ্ধ আসামি’ হিসাবে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আসক বলে, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত মামলাসমূহে অনেক নিরীহ নিরপরাধ নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বারবার দাবি করছে যে জুলাই আন্দোলনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কেবল শোক জানাতে আসা একজন সাধারণ নাগরিককেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বিষয়টি শুধু নিন্দনীয় নয়, এটি সরকারের নিজস্ব ঘোষিত নীতি ও নাগরিকের প্রতি অঙ্গীকারেরও ঘোরতর বরখেলাপ।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সাধারণ নাগরিককে শোক প্রকাশ করতে আসার কারণে শারীরিকভাবে আক্রমণ ও পরবর্তীতে কাউকে গ্রেফতার দেখানো নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন। একজন নাগরিক কোথায় যাবে, কোথায় যাবে না তা নির্ধারণ করার অধিকার কেবল সংবিধান প্রদত্ত স্বাধীনতার মাধ্যমে নাগরিকেরই থাকবে। অন্য কেউ বা রাষ্ট্রীয় সংস্থা এটি নির্ধারণ করতে পারে না।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আসক আরও মনে করে, শোক প্রকাশ করা বা না করা, যে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ, সমর্থন বা মৌনতা এবং মতপ্রকাশ-এসব নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার দমন করা মানে সংবিধান ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনপীড়নে লিপ্ত হয় তবে তা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।’
জেপিআই/এসএনআর/এমএস