আসিয়ান অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে মালয়েশিয়া। বর্তমানে এই অঞ্চলে আনুমানিক সাত মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন, যারা আয়োজক দেশ ও উৎপত্তিস্থলের অর্থনীতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব দাতুক আজমান মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, অভিবাসী শ্রমিকরা আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। তারা শুধু প্রবৃদ্ধিই নয়, সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখছেন। সোমবার শুরু হওয়া ১৮তম আসিয়ান ফোরাম অন মাইগ্র্যান্ট লেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দুই দিনের এ ফোরামের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘আসিয়ানে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ অভিবাসন ও শালীন কাজের ওপর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করা।’
আজমান স্বীকার করেন, অভিবাসী শ্রমিকরা এখনও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন— যেমন জোরপূর্বক শ্রম, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, অসাধু এজেন্টদের শোষণ ও উচ্চ নিয়োগ ব্যয়। এসব সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় মালয়েশিয়া এরই মধ্যে সোসিয়াল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন এবং এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রকল্পের আওতায় বিদেশি কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আজমান বলেন, এ উদ্যোগ শ্রমিকদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার তৈরিতে মালয়েশিয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করে।
মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরে একটি কারখানায় কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিক রুবেল মিয়া বলেন, আমরা দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করি। বেতন ঠিকমতো পেলেও মাঝে মাঝে অতিরিক্ত সময়ের মজুরি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। যদি সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার আরও শক্তভাবে নিশ্চিত করে, তাহলে আমাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।
নেপালি শ্রমিক সুনীল কুমার জানান, বিদেশে কাজ করতে আসতে আমাদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়। অনেক সময় দালালরা প্রতারণা করে। যদি নিয়োগ ব্যয় কমে আসে, তাহলে আমাদের পরিবারও আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি পাবে।
মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা তালকা মাহমুদ বলেন, আমাদের শ্রমিকরা শুধু রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে না বরং মালয়েশিয়ার শিল্প ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখছে। তাই অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার এই প্রতিশ্রুতি আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।
আরেকজন প্রবাসী সংগঠক জানান, শ্রমিকরা যে সমস্যাগুলো ভোগ করছে— বিশেষ করে চুক্তি লঙ্ঘন, চিকিৎসা সুবিধার অভাব ও নিয়োগ ব্যয়— সেগুলোর দ্রুত সমাধান জরুরি। আশা করি ফোরামের সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে।
ফোরামটি আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র, নিয়োগকর্তা সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের একত্রিত করে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় যৌথ কৌশল নির্ধারণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
এই বছরের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জোরপূর্বক শ্রমমুক্ত নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি এবং অভিবাসন ও নিয়োগ ব্যয় হ্রাসে।
মালয়েশিয়া, আসিয়ান সচিবালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, জাতিসংঘ নারী সংস্থা ও আসিয়ান মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স টাস্ক ফোর্সের সহযোগিতায় এ ফোরামের আয়োজন করে।
১৮তম এএফএমএল ফোরামের আলোচনার ভিত্তিতে সুপারিশসমূহ আসিয়ান অভিবাসী শ্রমিক কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং একটি আঞ্চলিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
এমআরএম/জেআইএম