শ্রীনগরের কৃষকদের পেরিলা ও মৌমাছি চাষ প্রশিক্ষণ দিলো শেকৃবি

3 months ago 43

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্ভাবিত জাত ‘সাউ পেরিলা-১’ ও উদ্ভাবিত মৌ চাষ প্রযুক্তি প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে অবহিতকরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে শেকৃবি বহিরাঙ্গন বিভাগ। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রায় ৩০ জন কৃষক এ প্রোগ্রামে অংশ নেন।

সোমবার (১০ জুন) সকাল ৯টায় শেকৃবির উদ্ভাবিত জাত ‘সাউ পেরিলা-১’ নিয়ে চারা উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি ও তেল তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ দেন উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসাইন। পরবর্তীসময় মৌমাছি চাষ প্রযুক্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন।

প্রশিক্ষক অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসাইন কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি লোক হওয়ায় প্রধান ফসল ধান চাষে আগ্রহ বেশি। ফলে তেলজাত ফসল উৎপাদনে সবসময়ই ঘাটতি থেকে যায়। তেলের ভেতর সবচেয়ে ভালো তিসি ও পেরিলা। কিন্তু তিসি শীতকালে চাষ করা হয় ফলে অন্য রবিশস্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। অন্যদিকে পেরিলা বর্ষাকালে যখন মাঠে কোনো প্রকার ফসল থাকে না তখন চাষ করা যায়। মাঠে মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যেই পেরিলা উৎপাদন সম্ভব। পেরিলাতে উপকারী ওমেগা-৩ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড আছে যা বয়সের ছাপ রোধে ভূমিকা রাখে। পেরিলায় প্রায় ১০০ কেজিতে ৩৯ কেজি তেল পাওয়া যায়। বাজারে পেরিলা বীজ ও তেল উভয়েরই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে যার ফলে কৃষকরা চাষ করলে প্রতি সিজনে সাড়ে ১২ হাজার টাকার মতো লাভ করতে পারবে। এছাড়া সয়াবিনসহ অন্য ভোজ্যতেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের ডলার খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে পেরিলা।

শ্রীনগরের কৃষকদের পেরিলা ও মৌমাছি চাষ প্রশিক্ষণ দিলো শেকৃবি

প্রশিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, মৌ চাষে শুধু মধুই পাওয়া যায় না বরং পোলেন, মোম ইত্যাদিও সংগ্রহ করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পারি। আমরা যদি আমাদের বাড়ির পাশে বারমাসি সজিনা, লিচু, লেবু, বরই, ক্ষুদে জামসহ বিভিন্ন প্রকার ফলজাতীয় গাছ লাগাই তাহলে একই সঙ্গে ফল ও গাছে প্রাকৃতিক মৌমাছি থেকে মধু পেতে পারি। শুধু ফুল নয় গাছের পাতার গোড়ার রস, রাবার গাছের পাতার কস এমনকি এফিড (জাব) পোকার দেহ থেকেও মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। মৌমাছি যদি পরাগায়নে আমাদের সহযোগিতা না করে সেক্ষেত্রে ফসল ফলানো আমাদের জন্য অসম্ভব প্রায়। তাই আমাদের এদের রক্ষা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের পরিচালক অধ্যাপক ড. শরমিন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, বহিরাঙ্গন বিভাগের সহযোগী পরিচালক ড. দেবু কুমার ভট্টাচার্য, শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ এবং প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাঙ্গন বিভাগ সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কারগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। আপনারা (কৃষক) আমাদের চেয়ে কৃষিকাজে বেশি অভিজ্ঞ। আপনাদের সমস্যাগুলো আমাদের জানাবেন যেখান থেকে আমরা আমাদের গবেষণার বিষয়গুলো জানাতে পারবো। আপনাদের সহযোগিতা পেলেই আমরা আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে পারবো।

শ্রীনগরের কৃষকদের পেরিলা ও মৌমাছি চাষ প্রশিক্ষণ দিলো শেকৃবি

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেকৃবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক অলোক কুমার পাল বলেন, এখানে (শ্রীনগরে) আমাদের আগে আসা হয়নি। তবে এখন থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ শ্রীনগরে আরও ত্বরান্বিত হবে। আজ আমরা পেরিলা ও মৌমাছি চাষের প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি। সয়াবিন তেল হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। পেরিলা তেল শরীরের জন্য ভালো এবং একই পরিমাণ বীজ থেকে বেশি পরিমাণ তেল পাওয়া যায়। আপনাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও সমস্যাগুলো আমাদের জানাবেন যেন তা আমাদের ছাত্রদের জানিয়ে দেশের কৃষিখাত এগিয়ে নিতে পারি।

বক্তৃতা শেষে কৃষকদের মাঝে নজরুল ইসলাম অভিব্যক্তি জানানোর সময় বলেন, আপনারা যে সেবা দিলেন তা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি এবং সে অনুযায়ী কাজ করি তবে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে এবং পৃথিবীর সেরা তালিকায় স্থান করে নেবে।

তাসনিম আহমেদ তানিম/বিএ/জেআইএম

Read Entire Article