নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ষাঁড়ের লড়াইয়ের প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে। এ সময় একটি ষাঁড় গরুসহ সাতটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর ছয়টার দিকে উপজেলার দলপা ইউনিয়নের জল্লী এলাকার একটি মাঠে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সেনাবাহিনীর দাবি, আয়োজকরা সেখানে ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়া খেলার আয়োজন করেছিল। সেনাবাহিনী হাজির হলে জুয়াড়িরা হামলার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছোড়া হয়।
এদিকে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেনা ক্যাম্পের উপঅধিনায়ক মেজর জিসানুল হায়দায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ সময় অভিযানের বিষয়টি নিয়ে মেজর জিসানুল হায়দায় ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমানের মধ্যে বিতর্ক হয়।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, পুলিশ ও নেত্রকোনা অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জল্লী এলাকায় ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়া খেলার আয়োজন করে কিছু ব্যক্তি। গোপন সূত্রে তা জানতে পেরে নেত্রকোনা সেনা ক্যাম্পের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় আয়োজকেরা সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলার চেষ্টা করে। তখন এক রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি অনুকূলে আনেন।
আটকরা হলেন- ময়মনসিংহের নান্দাইলের বড়াইল গ্রামের মিজানুল হক, গৌরীপুরের কান্দা গ্রামের সবুজ মিয়া, বীর আহামদপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম, কেন্দুয়ার ভগবতীপুর গ্রামের এখলাছ মিয়া, বলাইশিমুল গ্রামের অন্তর মিয়া, সদর উপজেলার ঢুলিগাতি গ্রামের মাসুম ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার পাইকরাটি গ্রামের পিন্টু মিয়া।
অপরদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভায় উপস্থিত থাকা একজন সদস্য জানান, মেজর জিসানুল হায়দার ওই জুয়ার আয়োজন থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন। একজনের বরাত দিয়ে মেজর জিসান বলেন, সেনাবাহিনী অভিযান চালালে একজন বলেন, আপনারা কেন আসছেন? পুলিশকে টাকা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান অভিযোগের দায় অস্বীকার করে সেনাবাহিনীকে ঢালাওভাবে না বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ কথা বলার অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জিসানুল হায়দার বলেন, ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়া খেলার তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীর ওপর হামলার চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।
অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় মেজর জিসানুল হায়দার বলেন সকালে কেন্দুয়া থানা এলাকায় ষাঁড়ের লড়াই থামাতে গিয়ে লাইভ ফায়ারিং করেন এবং ওখানে কেউ একজন বলেন, পুলিশকে টাকা দিয়েছি, আপনারা কেন এসেছেন। ওখানে পুলিশ লেখা একটি মোটরসাইকেলও ছিল। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি জানাই কোন পুলিশ টাকা নিয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে বলেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক বনান বিশ্বাস বলেন, জুয়া খেলার নামে ষাঁড়ের লড়াইয়ের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। ঘটনাটির খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
এইট এম কামাল/এফএ/জেআইএম