অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, বাংলাদেশ তখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত একটা দেশ। এসময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তারা সহিংসতারও শিকার হয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়ে যেসব প্রচার-প্রচারণা হয়েছে তা ছিল সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত। অল্প যেসমস্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হয়েছে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের দুমাসের মাথায় দেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার পূজামণ্ডপে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্বাহী আদেশে একদিন অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয় যা উৎসবের আমেজকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। দুর্গাপুজাকে ঘিরে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেই। যার ফলে, দেশের হিন্দু সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করেছে। আমরা দায়িত্বে আসার পর যে অল্প কিছু ক্ষেত্রে তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন আমরা তার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, দেশের কোনো মানুষই যাতে কোনো রকম সহিংসতার শিকার না হয়, সেজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এবং সব সময় সে চেষ্টা করে যেতে থাকব।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন চলতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬টি বন্যা হয়েছে। আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা এই বন্যা মোকাবিলা করেছি। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী বন্যা মোকাবিলায় জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। বন্যা মোকাবিলা ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান এবং স্থানীয় অনুদানের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। বন্যার ফলে অনেক জায়গায় ফসলহানি হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল। বন্যা পরবর্তী সময়ে বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে আপনাদের কষ্ট হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ানো জন্য আমরা সাড়ে ৯ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এজন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ডিমের উৎপাদনকরা যাতে সরাসরি বাজারে ডিম সরবরাহ করতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে কৃষি পণ্য কিনতে পারে সেজন্য রাজধানীসহ বিভিন্ন স্পটে সরকারি কিছু পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি নিম্ন আয়ের ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বন্যার ফলে চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও দাম যাতে স্বাভাবিক থাকে এজন্য সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের কোনো লুকোচুরি নেই। মূল্যস্ফীতির পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি রোধে উচ্চ সুদের হার নির্ধারণসহ একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে শস্য আমদানিতে এলসি সীমা অপসারণ এবং সরবরাহ চেইন সংক্ষিপ্ত করা।
তিনি বলেন, সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে। শিল্প কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যাহত না হয় এবং রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। গণ-শুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি বাজারে পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে এটা ভূমিকা রাখবে। নেপাল থেকে পানিবিদ্যুত বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।