সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হবে না : বিএমজেপি 

1 month ago 12
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা বা সুখবর নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল।  শনিবার (০৯ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএমজেপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুকৃতি মন্ডল এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, যখন নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, তখন দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার পরিপন্থি। একটি জাতিকে উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে না। সংবিধান ও জুলাই ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া; ঐকমত্য কমিশনসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’কে আমন্ত্রণ না জানানো এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রকার মতামত গ্রহণ না করার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে বিএমজেপির সভাপতি আরও বলেন, যখনই দেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তার আঁচ এসেছে। যে ঘটনাগুলো আমাদের সেই বিভীষিকাময় ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতিহাসের আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে- আমাদের সংবিধান, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, তা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রায় অনুপস্থিত। এই সংবিধান আমাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমরা বছরের পর বছর ধরে সংবিধানের এই বৈষম্যমূলক দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এসেছি, কিন্তু কোনো সরকারই এ বিষয়ে কর্নপাত করেনি। এ সময় সুকৃতি মন্ডল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও স্বার্থরক্ষায় বিএমজেপি’র পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ৬ দফা দাবি জানান। ১. হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে যেন কোনো অপরাধী পার না পায়, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। ২. ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা, বাড়িঘর ও উপাসনালয় পুনর্নির্মাণে পর্যাপ্ত সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অপরিহার্য। ৩. সংবিধানের সংস্কার: একটি সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক। এই কমিশনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সুরক্ষা, অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সংবিধানের ধারাগুলো সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ৪. জুলাই ঘোষণাপত্রে সংশোধন: জুলাই ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক। ৫. বিশেষ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, জমি দখল এবং হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক, যা সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ৬. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ: জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক। দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সুকৃতি মন্ডল বলেন, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকেই সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হতে হবে।  সংবাদ সম্মেলনে বিএমজেপির মহাসচিব দিলীপ কুমার দাস, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ (অব.) নিরদ বরণ মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ বর্মন, চান মোহন রবিদাস, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার বেপারী, সদস্য অনীল পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Read Entire Article