সংখ্যালঘুদের ঘর-মন্দির পাহারার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছি

2 months ago 24

দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মন্দির ও উপাসনালয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে ছাত্র-জনতা। তাদের উদ্যোগে খুশি সংখ্যালঘু লোকজন। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

রানা দাশগুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মন্দির ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের ঘর পাহারা দিচ্ছে। বিষয়টাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ নতুন সরকার আসা পর্যন্ত সংখ্যালঘু এলাকা, প্রতিষ্ঠান ও মানুষকে তারা নিরাপত্তা দিক।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশে মন্দির বা উপাসনালয়ে হামলার তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেসকিউ টিম গঠনের জন্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ব্যাপারে সমন্বয়ক এবি জুবায়ের বলেন, জেলাভিত্তিক সমন্বয়কদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রত্যেক জেলার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি করে রেসকেউ টিম গঠন করুন৷ এই টিম নিয়ে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ ক্রিয়েট করবেন এবং সেই গ্রুপে এবি জুবায়ের আমাকে এড করে দিবেন।
রেসকিউ টিমের কাজ হবে - নিজ নিজ জেলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, কারো ওপর জুলুম হচ্ছে মর্মে সংবাদ পাওয়া গেলে দ্রুত সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা।

সংখ্যালঘুদের ঘর-মন্দির পাহারার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছি

‘আমরা তাদের কর্মকাণ্ডে খুশি’

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে রতন চন্দ্র রায় নামের এক ব্যক্তি বলেন, শীতার কোড এলাকার দাদুরি গ্রামে প্রায় ১১০ হিন্দু পরিবারের বসবাস। গতরাতে তাদের মন্দির ও বাড়ি আক্রমণ করবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। এরপর জামায়াত-শিবিরের ৩০-৩৫ জন সেখানে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। গ্রামবাসী নির্ভয়ে রাতে ঘুমাতে পেরেছে। আমরা তাদের কর্মকাণ্ডে খুশি।

সংখ্যালঘুদের ঘর-মন্দির পাহারার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছি

‘আমরা একসঙ্গে সবসময় এভাবেই থাকতে চাই’

শরীয়তপুরে রাত জেগে মন্দিরে পাহারা দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকার বাসিন্দা রনি দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের শরীয়তপুর জেলাটি সম্প্রীতির বন্ধনে যুক্ত। পূজার সময় আমরা সবাই আনন্দ করি। তাদের ঈদেও দাওয়াতে যাই। বর্তমানে তাদের এই উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা একসঙ্গে সবসময় এভাবেই থাকতে চাই।’

ডামুড্যা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হরিসভা মন্দিরের সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ মালো বলেন, ‘আমরা শরীয়তপুরের হিন্দু সম্প্রদায় খুবই আনন্দিত। এখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের তথা জামায়াত-শিবিরের ভাইয়েরা রাত-দিন কষ্ট করে আমাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

সংখ্যালঘুদের ঘর-মন্দির পাহারার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছি

‘মিলেমিশে থাকতে চাই, কোনো ধর্মীয় সংঘাত চাই না’

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ফজরের নামাজের পর থেকে বিভিন্ন কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় বিভিন্ন মন্দির প্রাঙ্গণে পাহারার ব্যবস্থা করে।

মন্দিরে পাহারারত মোস্তাক আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের সব মন্দিরের নিরাপত্তা দিচ্ছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নিখিল চন্দ্র জানান, ‘মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে সারারাত। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। কোনো ধর্মীয় সংঘাত চাই না।’

সংখ্যালঘুদের ঘর-মন্দির পাহারার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছি

হবিগঞ্জ বানিয়াচংয়ে হাসপাতাল গেট সংলগ্ন শ্রী শ্রী বুড়া শিববাড়িতে নিরাপত্তা দিচ্ছে একদল শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলাসহ দেশের একাধিক স্থানের মন্দির ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা।

এমএমএআর/জিকেএস

Read Entire Article