সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ রাখার দাবিতে একযোগে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছেন দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয় দুটি ছাড়া শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয় না। ফলে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
কর্মসূচিতে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী গান এবং ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এর আগে বুধবার (৫ নভেম্বর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলেন।
- প্রাথমিক স্কুলে সংগীত শিক্ষকের পদ বাতিল, জাবিতে গানের মিছিল
- প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলে সরকারের ব্যাখ্যা
জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট জারি হওয়া ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’-এর গেজেটে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সংগীত শিক্ষকের বদলে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি তোলেন। সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করা না হলে তারা আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন।
তাদের আপত্তির মুখে গত ২ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত গেজেটে পদ দুটি বাতিল করা হয়। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আড়াই হাজার ক্লাস্টারে সমসংখ্যক শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। সম্প্রতি সচিব কমিটির সুপারিশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রস্তাবিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলে একই শিক্ষককে ২০টির অধিক বিদ্যালয়ে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ফলে তার পক্ষে কর্মঘণ্টা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না বলে সচিব কমিটি মনে করে।
ঢাবি-রাবি-চবি-জবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বৃহস্পতিবার সমাবেশ করেছেন ঢাবির সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভিত্তির ওপরই সভ্যতা টিকে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে সংগীতকে বাদ দেওয়া হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন বলেন, কোনো রাষ্ট্র শুধু ধর্মের ওপর ভিত্তি করে এগোতে পারে না। সংস্কৃতি কখনোই ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সংগীত শুধু বিনোদন নয়, শিশুর মানসিক বিকাশে এর ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বিষয় বাতিলের এ ধরনের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাপচিত্র বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বজলুর রশিদ খান বলেন, একটি সুস্থ মনের জন্য সংগীত এবং সুস্থ শরীরের জন্য শারীরিক শিক্ষা প্রয়োজন।
একই দাবিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ পুনর্বহাল করা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াশাদ জাকির বলেন, আধুনিক শিক্ষায় সংগীত শুধু সংস্কৃতি নয়, মানসিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক পদটি পুনর্বহাল করা জরুরি।
এএএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

1 day ago
6








English (US) ·