সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রশ্নে সম্প্রতি হাইকোর্টে রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিদ্যমান সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়া এবং তদস্থলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ প্রতিস্থাপনের যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা’। ঐক্যমোর্চার অভিমত, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সংবিধানের পরিবর্তন হবে আত্মঘাতী।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই মোর্চার এক সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তে এ কথা বলা হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মৌলনীতি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়ার বিষয়টি গণতন্ত্র, পরমতসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘুর অধিকার, আইনের শাসনে নাগরিকের সমতা, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির ব্যবস্থা, মুক্তিযুদ্ধ ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের পরিপন্থি হিসেবে সংবিধানে পরিবর্তন এবং পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ২ক অনুচ্ছেদে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংযোজন করার মধ্যদিয়ে নাগরিকদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার সংগঠনসমূহ তিন যুগ ধরে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল এবং অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা মনে করে, অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানিতে প্রদত্ত বক্তব্য একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থি; অন্যদিকে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সংশ্লিষ্ট শুনানিতে তার প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে- যেন অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সাংবিধানিক সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু লীগের মহাসচিব শংকর সরকারের সভাপতিত্বে এবং ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের (প্রভাষ-পলাশ) নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, সনাতন সংগঠন বাংলাদেশের সাজু চৌধুরী, রিসার্চ অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (রিও) সভাপতি প্রফেসর চন্দন সরকার, সনাতন একতা মঞ্চের স্বামী মহেশ্বরানন্দ মহারাজ, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মিথুন ভট্টাচার্য্য (শুভ), বাংলাদেশ হিন্দু যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজেস নাহা, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক থিওফিল রোজারিও, ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতি দেবী প্রমুখ।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।