সংশোধিত ফলাফলে বাদ পড়লেন কারা, নতুন ক্যাডার কতজন

2 hours ago 7

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া ৩০৩ জন প্রার্থী জানান—তারা আগের কোনো বিসিএসে একই ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে ক্যাডার সার্ভিসে কর্মরত। ফলে এর চেয়ে উচ্চ পছন্দের কোনো ক্যাডারে না দিলে তারা নতুন করে যোগদান করবেন না। এতে ৩০৩টি পদ শূন্য থেকে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।

সাড়ে তিন বছর নিয়োগপ্রক্রিয়া চালিয়ে এতসংখ্যক পদ শূন্য রাখা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কমিশন সভা করে বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়, যার মাধ্যমে রিপিট ক্যাডার (একই ক্যাডারে আগে নিয়োগ পাওয়া) বন্ধ করা সম্ভব হবে।

পিএসসির বিধি সংশোধনের সেই প্রস্তাব অনুমোদনে দেখা দেয় লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘুরে তা অনুমোদনে পাঁচ মাস সময় নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অবশেষে ২৮ অক্টোবর বিধি সংশোধনের গেজেট জারি করা হয়।

রিপিট ক্যাডার ইস্যু, বিধি সংশোধন এবং তা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে ৪৪তম বিসিএস বেশ আলোচিত। সবার দৃষ্টি ছিল—সংশোধিত ফলাফলে কতজন বাদ পড়েন, আর নতুন করে ক্যাডার পদে নিয়োগের ভাগ্য খুলে কতজনের।

অবশেষে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে এ ফল প্রকাশ করা হয়। পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) মাসুমা আফরীনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ ফল প্রকাশিত হয়।

বাদ পড়লেন কতজন, নতুন ক্যাডার হলেন যারা
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ছিল এক হাজার ৭১০টি। এর বিপরীতে প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগে সুপারিশ করা হয়েছে এক হাজার ৬৮১ জন প্রার্থীকে।

পিএসসি জানায়, প্রথম দফায় গত ৩০ জুন প্রকাশিত ফলাফলে সাময়িকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে ৩০৩ জন লিখিতভাবে জানান যে, তারা বর্তমান কর্মরত একই ক্যাডার পদে বা তার চেয়ে নিচের কোনো পদে যোগদান করবেন না। এ সংকট কাটাতে বিধি সংশোধন করা হয়।

সংশোধিত বিধি অনুযায়ী—রিপিট ক্যাডারের ৩০৩ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ২৬০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৩ জনকে তার বর্তমান কর্মরত ক্যাডারের চেয়ে উচ্চ পছন্দের ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে বাদ দেওয়া ২৬০ জনের জায়গায় নন-ক্যাডারের তালিকায় থাকাদের মধ্য থেকে ২৫৭ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। তারা নতুনভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ রিপিট ক্যাডার ইস্যুতে তাদের কপাল খুলেছে।

যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ২৯ পদ ফাঁকা
দীর্ঘ প্রায় চার বছর পর ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে ২৯টি ক্যাডার পদ শূন্য রেখেছে পিএসসি। এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ছিল এক হাজার ৭১০টি। চূড়ান্ত ফলাফলে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছেন এক হাজার ৬৮১ জন। অর্থাৎ, ২৯টি ক্যাডার পদ শূন্য রয়ে গেছে।

ফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪৪তম বিসিএসের প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের ২৯টি পদে প্রার্থী মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রচেষ্টা থাকলেও পদগুলোতে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় পদগুলো শূন্যই থেকে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে পিএসসি।

ক্যাডার পদে ৫ জনের সুপারিশ বাতিল
রিপিট ক্যাডার ইস্যুতে প্রায় পাঁচ মাস ঝুলে থাকা ৪৪তম বিসিএসের সংশোধিত ফলাফলে কপাল পুড়েছে পাঁচজন প্রার্থীর। তারা আগের দফায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তবে বিএড/এমএড সনদ না থাকায় তাদের সুপারিশ বাতিল করা হয়েছে।

পিএসসি জানায়, বিএড বা এমএড সনদ না থাকায় পাঁচজন প্রার্থীর (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১১১৪৫০৯৫, ১১০৬৪৮০৬, ১১০৮৮০৯৮, ১১০৭৫৭৩৮ এবং ১৩০০৫৮৬৯) অনুকূলে গত ৩০ জুন দেওয়া ‘প্রভাষক, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ’ ক্যাডারের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

নন-ক্যাডারের তালিকায় ৭৫৪৯ জন
৪৪তম বিসিএসের প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলেও ক্যাডার পদে স্বল্পতার কারণে সবাইকে সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৫৪৯ জন। তাদের তালিকাও প্রকাশ করেছে পিএসসি।

ফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যেসব প্রার্থীকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি, তাদের ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা, ২০২৩’-এর বিধান অনুযায়ী সরকারের কাছ থেকে শূন্যপদে নিয়োগের ‍রিকুিইজিশন প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে নবম, দশম, ১১তম ও ১২তম গ্রেডের নন-ক্যাডার পদে মেধাক্রম অনুযায়ী এবং বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করে সুপারিশের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তবে এ ধরনের উদ্যোগ মনোনয়নপ্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা প্রদান করবে না। সরকারের কাছ হতে শূন্য পদে প্রাপ্যতা, সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিধি অনুযায়ী যোগ্যতা রয়েছে এবং মেধা ও সরকারের সবশেষ কোটা নীতি অনুযায়ী নন-ক্যাডার শূন্যপদে মনোনয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পছন্দক্রম আহ্বান করা হবে।

এক বিসিএস শেষ করতে চার বছরের অপেক্ষা
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে আবেদন করেন প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ৭০৮ জন।

২০২৪ সালের এপ্রিলে এ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে প্রথম দফায় এবং সরকার পতনের পর ২৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় তা স্থগিত করা হয়।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোট ১১ হাজার ৭৩২ জনের মধ্যে ততদিনে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর ‌‘ন্যায্যতা বজায় রাখতে’ প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগের কমিশনের নেওয়া পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি।

চলতি বছর তাদের পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য এক হাজার ৬৮১ জন চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশ পেলেন। সুপারিশ পেতে তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এএএইচ/এমআইএইচএস

Read Entire Article