অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঢালাওভাবে আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ। অবিলম্বে ট্যাগ লাগানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশব্যাপী মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন অব্যাহতভাবে চলছে। কিন্তু এর তেমন কোনো প্রতিকার না হওয়ায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে ভীতসন্ত্রস্ত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, যা নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত ও সৌহার্দ্যহীন করে তুলছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন ৪১টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম সম্মিলিত সনাতন পরিষদের নেতারা।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের প্রতিবাদে তারা এই সংবাদ সম্মেলন করে। একই সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের পর হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিও জানানো হয়।
সংগঠনের নেতাদের দাবি, ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দির ভাঙচুর, সম্পদ লুণ্ঠন, হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিত ও ধর্মীয় অবমাননার অজুহাতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু একটি ঘটনারও সঠিক বিচার পাওয়া যায়নি।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার ও বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে ইসকনকে সনাতন ধর্মাদর্শ থেকে আলাদা করে দেখিয়ে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ ইসকন সনাতন ধর্মাদর্শের অন্তর্ভুক্ত একটি অভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কেউ কেউ ইসকন নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়ে যথাসময়ে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, অন্যথায় কোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতির দায়টা বর্তাবে সরকারেরই ওপর।
সরকার পতন হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার জের ধরে ক্ষতিপূরণসহ যে আট দফা দাবি জানিয়ে আসছে, তা বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছে সম্মিলিত সনাতন পরিষদ। তারা বলেছে, এখন যেহেতু সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে, সংস্কার সাধনের প্রক্রিয়ায় গঠনসাপেক্ষ সব কমিশন ও প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী থেকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
সংগঠনের নেতারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢালাওভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি চাকরি থেকে সনাতনীয় সম্প্রদায়ের লোকদের চাকরিচ্যুতকরণ, নতুন সরকারি নিয়োগগুলোতে ও সংস্কার কমিটিগুলোতে সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব না থাকা, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরিরত সনাতনীয় সাম্প্রদায়ের লোকদের ও সনাতনী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণহারে ঢালাওভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং সনাতনী শিক্ষকসহ সব শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত ও লাঞ্ছনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান নেতারা। একইসঙ্গে অনতিবিলম্বে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ আচার্য্য, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জেকে পাল, প্রধান সমন্বয়ক শ্যামল রায়, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়, বাংলাদেশ হিন্দু লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শংকর কুমার দাস, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের সভাপতি বরুন সরকার, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির (বিএসপি) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক অশোক তরু, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র সাজন কুমার মিশ্র, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ দাস, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির (বিএসপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রাণতোষ তালুকদার, বাংলাদেশ হিন্দু লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর সরকার, ভক্ত সংঘ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনিল পাল, বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ জোটের মুখপাত্র শ্যামল ঘোষ, বিশিষ্ট সমাজ সেবক উত্তম দাস, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন লিটন নন্দী, প্রকৌশলী দিপংকর বেপারি, গৌরব হালদার, সাধন মজুমদার, সাধন মন্ডল, সুমন চন্দ্র দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।