‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’—চারদিকে যখন এই স্লোগানে বসন্ত কড়া নাড়ছে। আমার শহরে তখন দেখা মেলে এক সন্ধ্যামালতির। যে রাতে ও সকালে ফোঁটে। তাকে দিনের আলোয় দেখা যায় না। সূর্য ওঠার সাথে সাথে আমাদের জীবনের শুরু হলেও তার জীবন তখন ঘুমিয়ে থাকে। তার ঘুম ভাঙে ভোরের ছিমছাম আলোয়। শিশির ভেজা ঘাসের ছোঁয়ায়।
মাঝে মাঝে কুকুরের উচ্চ শব্দে সে প্রায় বিরক্ত হয়ে যায়। অপেক্ষায় থাকে কখন সূর্য উঠবে; কখন সে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাবে। তখন তাকে উত্ত্যক্ত করার কেউ থাকবে না, থাকলেও তার ঘুম ভাঙবে না। বিধাতা তাকে এভাবেই তৈরি করেছেন। সূর্য যখন অস্ত যায়; তখন সে পুনরায় জেগে ওঠে। শহরজুড়ে তার আনাগোনা। কেউ তাকে দমাতে পারে না। অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় কিংবা সুউচ্চ পাহাড় সব জায়গায় তার বিচরণ। তার সুগন্ধে মুখরিত সারা পৃথিবী।
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যামালতি এক দানবের পাল্লায় পড়ে। যে দানব শহরের সব গাছকে উচ্ছেদ করে দিচ্ছে। উচ্ছেদ করে সে অট্টালিকা করবে। এখন সন্ধ্যামালতির কী হবে! সে কোথায় যাবে! তার যে যাওয়ার জায়গার বড্ড অভাব। এবার কি তাহলে সে সবার মতো উচ্ছেদ হয়ে যাবে!
তাকে কি আর শহরে দেখা যাবে না! সে কি আর কখনো কুকুরের ডাক শুনবে না। সন্ধ্যায় ঝিঁঝি পোকার সাথে গুঞ্জন করে গান গাইবে না! এ চিন্তায় তার দিন-রাত কাটতে থাকে। একদিন ভোরে শোনা যায় না কুকুরের আর্তনাদ। ফোটে না ভোরে সন্ধ্যামালতিরা। জাগে না সন্ধ্যায়।
সন্ধ্যামালতি পড়ে আছে বিশাল অট্টালিকার নিচে। শহরগুলো আজ দালান কোঠায় ভরপুর। শহরের আনাচে-কানাচে সন্ধ্যামালতি না ফুটলেও ছাদে তাদের দেখা মেলে মন খারাপের বেশে। সারি সারি টবের মাঝে একটি টবে তাদের স্থান হলেও সুরভিত হয় না। ঘ্রাণ ছড়ায় না শহরজুড়ে। সন্ধ্যামালতিরা কীভাবে আজ শোভা পাবে ছাদে বা বেলকনিতে?
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।
এসইউ/জেআইএম

4 months ago
16









English (US) ·