সফরে দুইজন মিলে জুমা আদায় করা যাবে?

4 hours ago 3

প্রশ্ন: সফরে থাকা অবস্থায় দুইজন মিলে জুমা আদায় করা যাবে?

উত্তর: জুমা অর্থ সম্মিলন বা জমায়েত। জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো কিছু সংখ্যাক মানুষের জমায়েত। কিছু সংখ্যাক মানুষ একসাথে জামাতবদ্ধ হয়েই জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ একা আদায় করা গেলেও জুমার নামাজ একা আদায় করা যায় না।

শুধু তাই নয়, জুমার নামাজ দুইজন বা তিনজন মিলে জামাতের সাথেও আদায় করা যায় না। ইমাম আবু হানিফার (রহ.) মত অনুযায়ী জুমা আদায় করার জন্য ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি থাকতে হয়। অর্থাৎ অন্যান্য শর্ত পূরণ হওয়া সাপেক্ষে অন্তত চারজন ব্যক্তি চাইলে জামাতের সাথে জুমা আদায় করতে পারবে, এর কম নয়।

জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য জামাত অত্যাবশ্যক এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ নেই। তবে জামাত কত বড় হতে হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আবু হানিফার (রহ.) মতে ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি থাকলে জুমা শুদ্ধ হবে যেমন আমরা ওপরে উল্লেখ করেছি। ইমাম মালেকের (রহ.) মতে জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের সাথে কমপক্ষে বারোজন পুরুষ মুসল্লি থাকতে হবে। ইমাম শাফেঈ ও আহমদের (রহ.) মতে জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে চল্লিশজন মুসল্লি থাকতে হবে। চল্লিশজনের জামাত ছাড়া জুমা শুদ্ধ হবে না।

জুমা আদায় করার জন্য আরও যেসব শর্ত পূরণ করা জরুরি

১. জুমার সময় হওয়া

জুমার নামাজ আদায়ের নির্ধারিত সময় হলো জুমার দিনের জোহরের সময়। জুমার দিন জোহরের সময়ের মধ্যেই জুমা আদায় করতে হবে।

২.  জুমার আগে খুতবা পড়া

নামাজের আগে খুতবা পড়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। খুতবা ছাড়া জুমা শুদ্ধ হয় না। জুমার খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, শরিয়তের বিধি বিধান বর্ণনা করা হয় এবং নবিজি (সা.), তার সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।

৩. জুমার জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া

জুমার জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। এ কারণে সবার জন্য উন্মুক্ত নয় এমন জায়গায় জুমা শুদ্ধ হয় না। যেমন জেলখানা মসজিদ, কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য বিশেষায়িত মসজিদ ইত্যাদি।

সফরে জুমা আদায় করা কি ফরজ?

কোনো ব্যক্তি ৪৮ মাইল (৭৭.২৩২ কিলোমিটার) রাস্তা অতিক্রম করে কোনো জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের শহর থেকে বের হলে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় তাকে মুসাফির বলা হয়। মুসাফির গণ্য হওয়ার জন্য সফর পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করা জরুরি নয়। সফরের নিয়তে নিজের শহর থেকে বের হয়ে এক মাইল অতিক্রম করলেও সে মুসাফির গণ্য হয়।

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির ইসলামি বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় পান। যেমন রমজান মাসে রোজা রাখা মুসাফিরের ওপর ফরজ নয়। মুসাফির ওই সময় রোজা ভেঙে পরবর্তীতে সেটা কাজা করতে পারে। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো অর্থাৎ জোহর, আসর ও ইশার নামাজ মুসাফিরদের কসর বা সংক্ষীপ্ত করে পড়তে হয়।

জুমার দিন জুমার নামাজ আদায় করাও ‍মুসাফিরের ওপর ফরজ নয়। মুসাফির সম্ভব হলে জুমা আদায় করবে, কিন্তু জুমা আদায়ের সুযোগ না পেলে জুমা ছেড়েও দিতে পারে।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ও পরকালের ওপর যাদের ইমান আছে, তাদের ওপর জুমা ফরজ। তবে অসুস্থ, মুসাফির, নারী, শিশু ও ক্রিতদাসদের ওপর জুমা ফরজ নয়। (বায়হাকি, দারাকুতনি) 

সফরে থাকা অবস্থায় জুমা ছুটে গেলে মুসাফির ব্যক্তি একা জোহর পড়ে নেবেন। কয়েকজন মুসাফিরের জুমা ছুটে গেলেও কোনো শহরে অবস্থান করা অবস্থায় জোহরের জামাত করবেন না। কারণ যে এলাকায় জুমা হয়, সেখানে জোহরের জামাত করা মাকরুহে তাহরিমি। তাই মুসাফিরদের কোনো দল জুমা আদায় করতে অক্ষম হলে তারা ওই দিনের জোহর প্রত্যেকে আলাদাভাবে আদায় করবেন।

জুমার দিন মুসাফির ব্যক্তি অন্যান্য দিনের মতোই জোহরের নামাজ কসর হিসেবে দুই রাকাত আদায় করবেন। জুমার নামাজ বা জুমার দিনের জোহরের নামাজ কাজা হয়ে গেলে পরবর্তীতে কাজা হিসেবে দুই রাকাত কসরই আদায় করবেন, চার রাকাত পড়বেন না।

ওএফএফ

Read Entire Article