‘সব হিসেব ও সমীকরণেই টি-২০তে আমরা একটু পিছিয়ে’

3 months ago 58

মাত্র কিছুদিন আগেই জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচকের পদে ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় একযুগ জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিনহজুল আবেদিন নান্নু। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের কে কেমন, কে কতদূর যেতে পারে- এসব নখদর্পনে এখনো নান্নুর। এ কারণেই কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ দলের সিরিজ হারে যারপরনাই কষ্ট পেয়েছেন তিনি। সে কথা প্রকাশ করতেও দ্বীধা করেননি।

বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার খারাপ লাগার অনুভূতি তৈরি করলেও নান্নুর কাছে এ সিরিজ খুব একটা গুরুত্ব বহন করছে না। নান্নু মনে করেন, প্রস্তুতি ম্যাচগুলোই আসল। সেখানকার পারফরম্যান্সই তার কাছে আসল। যদিও বৃষ্টির কারণে ২৮ মে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। সামনে ১ জুন, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখেই দলের অবস্থা পর্যালোচনা করা যাবে।

নান্নুর মতে, বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা সম্ভব বাংলাদেশের। তবে তার আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে প্রথম ম্যাচটাই ভালো করতে হবে বাংলাদেশকে। শুরুটা ভালো হলে অনেক দূর যেতে পারবে বাংলাদেশ।

সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর একান্ত সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য।

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কতদূর যেতে পারে বলে মনে করেন?

মিনহাজুল আবেদিন নান্নু: এটা এখনই বোঝা যাবে না। আমি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিরিজকে সম্ভাবনা যাচাইয়ের প্রধান মানদণ্ড মানতে নারাজ। ওিই সিরিজের যে কোনোই গুরুত্ব নেই। সেই সিরিজ পরাজয়টা যে আমি আমলে আনছি না, তাও না। আমি মূলতঃ তাকিয়ে আছি ২৮ মে ও ১ জুনের অফিসিয়াল প্র্যাকটিস ম্যাচ দুটির দিকে (২৮ মে প্র্যাকটিস ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যায়)।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আমেরিকায় বাংলাদেশ বিশ্বকাপের যে দুটি ম্যাচ খেলবে, সেই দুই ম্যাচের ভেন্যুতেই হওয়ার কথা ওই দুই প্র্যাকটিস ম্যাচ। এর একটি হবে ডালাসে (৮ জুন) আর আর অন্যটি (১০ জুন, নিউ ইয়র্কে)। কাজেই আমি ওই দুই ভেন্যুর পরিবেশ-পারিপাশ্বিকতা আর উইকেট ও মাঠের আকার প্রকৃতি জানতে মুখিয়ে আছি। ওই দুটি প্র্যাকটিস দেখলেই বোঝা যাবে ডালাস ও নিউইয়র্কের কন্ডিশন কেমন হবে?

জাগো নিউজ: তবে কি আপনার কাছে যুক্তরাষ্ট্রর সাথে তিন ম্যাচের সিরিজটির কোনই গুরুত্ব নেই?

নান্নু: নাহ! তা থাকবে না কেন? আমি ওই তিনটি ম্যাচই খুব মন দিয়ে দেখেছি। ম্যাচ তিনটির চুলচেরা বিশ্লেষণও করেছি। তারপরও বলছি আমার মনে হয়, বিশ্বকাপ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র (এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি) আর ভারতের বিপক্ষে যে দুটি অফিসিয়াল প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে ডালাস ও নিউইয়র্কে, সে দুটি গা গরমের ম্যাচই আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ওই খেলা দুটিতে সবার আগে উইকেট সম্পর্কে ধারনা জন্মাবে। ড্রপ ইন পিচে খেলা। সেই পিচের আচরণ কেমন? তা জানা যাবে। সেই উইকেটে টাইগারদের অ্যাপ্রোচ, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অ্যাপ্লিকেশন ও পারফরমেন্স দেখেই একটা ধারণা জন্মাবে মূল আসরে কতদূর যেতে পারে শান্তর দল?

জাগো নিউজ: আপনিতো একটানা প্রায় একযুগ দলের সাথে জড়িত ছিলেন, তাতে আপনার এ দলটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

নান্নু: দেখুন, এমনিতেই সব হিসেব নিকেশ ও সমীকরণেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের দল একটু পিছিয়ে। তারপরও আমাদের খেলোয়াড়দের সামর্থ্য আছে ভাল কিছু করার। যদি প্রথম ম্যাচটা ভাল হয়, মানে আমরা যদি শুরুটা ভাল করতে পারি, তাহলে হয়ত ভালই ফল হবে।

জাগো নিউজ: সেই ভালোর প্রকৃত রূপটা কী? আসলে টাইগাররা কতদূর যেতে পারে বলে আপনার ধারণা?

নান্নু: অবশ্যই দ্বিতীয় রাউন্ডই প্রত্যাশা করি। কারণ, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটাই এমন যে, এখানে শক্তির ফারাক তুলনামূলক কম। ছোট দল বড় দল বলে তেমন কিছু নেই। এখানে নির্দিষ্ট দিনের পারফরমেন্সটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শক্তি ও সামর্থ্যের ফারাকের চেয়ে এই ফরম্যাটে নির্দিষ্ট দিনের অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন আর পারফরমেন্সটাই মূল। তা দিয়ে যে কোন দলকে হারানো সম্ভব।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে তিনম্যাচের সিরিজকে আপনি কিভাবে দেখছেন? আপনি ওই সিরিজ পরাজয়ে খুব হতাশ?

নান্নু: হতাশ তো অবশ্যই। সেটা যতটা ফলে, তারচেয়ে মাঠের পারফরমেন্সে। আসলে প্রথম ম্যাচটি ছাড়া দ্বিতীয় ম্যাচটি তো আমাদের হাতেই ছিল। প্রথম ম্যাচের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমার মনে হয়, যেহেতু ওই মাঠে ১৯৯৬ সালের পর আমাদের জাতীয় দল আর কখনো আমেরিকা সফরে যায়নি। আর এই মাঠে, কখনো খেলিনি আমরা। তাই মাঠ ও উইকেট সম্পর্কে ধারণা ছিল না।

ওয়েদার কন্ডিশনও অনেক ডিফারেন্ট। সব মিলিয়ে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার ছিল। আমার মনে হয়, আমাদের ছেলেরা এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রথমদিন ম্যাচ খেলতে নেমে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি। কাজেই প্রথম ম্যাচ পরাজয়টাকে আমি একদম অবিশ্বাস্য বা অস্বাভাবিক বলবো না।

কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ খুবই হতাশাজনক। কারণ, সবকিছু আমাদের আয়ত্তে বা নিয়ন্ত্রনে ছিল। একদম নাগালের ভেতরে থাকা সে ম্যাচ না জেতা খুবই হতাশাজনক। সামগ্রিকভাবে সিরিজ হারটাও হতাশার। তারপরও তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে ওভারকাম করেছে। আমি সেটাকেই সামনে আগানোর রসদ ধরতে চাই।

সামনে বিশ্বকাপ, শেষের এই ম্যাচটা আমাদের দলের অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে বলে বিশ্বাস আমার। এখন সামনে প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে। যদি ছেলেরা ডালাস আর নিউইয়র্কের কন্ডিশনের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে পারে, তাহলে আশা করি ফল ভালই হবে।

জাগো নিউজ: বেশ কিছুদিন ধরেই ওপেনিং সংকট। কিছুতেই সে সংকট কাটছে না। নতুন বলে ওপেনাররা জ্বলে উঠতে পারছেন না একদমই। কেন?

নান্নু: আসলে আপনি কিভাবে ব্যাটিং করবেন, সেটা একান্তই আপনার নিজের ওপর। কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কোচ আপনাকে যতই শিখাক না কেন, টিম ম্যানেজমেন্ট আপনাকে যে নির্দেশনাই দিক না কেন, মাঠে খেলা শুরুর পর উইকেটে অ্যাডজাস্টমেন্ট ও বল বুঝে রান করা একান্তই আপনার নিজের। এখানে তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।

আমাদের তিনজন ওপেনার আছে, সবাই ক্যাপাবল। এরা যদি মনোযোগ দিয়ে রাইট অ্যাপ্রোচটা শো করতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপ ভাল হবেই। কারণ এরা টেকনিক্যালি কেউই খারাপ না। সবাই ক্যাপাবল। টেম্পরামেন্ট আর ধৈর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এআরবি/আইএইচএস

Read Entire Article