সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক, এক ম্যাচেই শেষ ক্যারিয়ার

2 months ago 5

খালিদ হাসান। পাকিস্তানি লেগব্রেক স্পিনার। যে সময়টায় পাকিস্তান জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন, সে সময়টায় টি-টোয়েন্টি তো দুরে থাক, ওয়ানডে ক্রিকেটেরও জন্ম হয়নি। ক্রিকেট বলতে ছিল একটিমাত্র ফরম্যাট, টেস্ট।

১৯৫৪ সালে নটিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন খালিদ হাসানের মাথায় টেস্ট ক্যাপ ওঠে, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ৩৫২ দিন। তখনকার সময় পর্যন্ত খালিদ হাসান ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ট ক্রিকেটার।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছে খালিদ হাসানকে। ১০ রান করেছিলেন তিনি। আবদুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল অলআউট হয়েছিলো ১৫৭ রানে। এরপর বল করতে গিয়ে খালিদ হাসান ২১ ওভার বল করে ১ মেডেনে ও ১১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।

ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে ৫৫৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে খালিদ হাসান ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তান অলআউট হয় ২৭২ রান করে। ইনিংস ও ১২৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে পাকিস্তান।

khalid hasan

মজার বিষয় হলো, সর্বকনিষ্ট হিসেবে অভিষেক হলেও পাকিস্তানি ক্রিকেটার খালিদ হাসানের ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য মাত্র একটি ম্যাচ। অভিষেক হলো ১৬ বছর ৩৫২ দিনে, ক্যারিয়ার শেষ হলো ১৬ বছর ৩৫৬ দিনে। মাত্র ৪দিনের ক্যারিয়ার।

তবে খালিদ হাসানের পর টেস্ট ক্রিকেটে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার তার চেয়েও কম বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে।

শুধু খালিদ হাসান নয়, ১ জুলাই ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য স্মরণীয়। আজকের এই দিনের আরও কিছু ঐতিহাসিক ক্রিকেট ঘটনা তুলে ধরা হলো-

২০০০: ইংল্যান্ডের নাটকীয় জয়

২০০০ সালের ১ জুলাই, লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি রোমাঞ্চকর টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করে ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য মাত্র ১৮৮ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড যখন ৮ উইকেটে ১৬০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দেন ডমিনিক কর্ক।

যিনি এরইমধ্যে ৫২ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। নিশ্চিত হারের মাথায় মাঠে নেমে তার মাথায় অন্য চিন্তা কাজ করছিল। তিনি ফ্র্যাঙ্কলিন রোজকে ছক্কা মেরে দেন। ইংল্যান্ড যখন তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন অবিশ্বাস্য উত্তেজনার পর, জয়সূচক বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে জয় এনে দেন। ৪৯ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন ডমিনিক কর্ক।

১৯৩২: টিচ ফ্রি-ম্যানের অবিশ্বাস্য বোলিং

টিচ ফ্রিম্যান হলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি এক মৌসুমে ৩০০ উইকেট নিয়েছিলেন এবং ১৯২৮ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি ২০৯০টি প্রথম শ্রেণির উইকেট নেন। ১৯৩২ সালের এই দিনে, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ফোকস্টোনে তিনি ৩১ রানে ৮টি এবং ৬১ রানে ৯টি উইকেট নিয়েছিলেন যখন কেন্ট ওয়ারউইকশায়ারকে ৭৪ রানে হারিয়েছিল।

১৯৯৩: ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্টের পাগলামি

অস্ট্রেলিয়ার কাছে এরই মধ্যে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড। সব মিলিয়ে টানা ৭ টেস্টে পরাজিত। ফলে ট্রেন্টব্রিজে ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া টেস্টে ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট এক পাগলামি করে বসে। অদ্ভূত এক সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পুরনোদের বাদ দিয়ে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে দলে নিয়ে আসে এবং অভিষেক করায়।

যাদের মধ্যে ছিলেন মার্ক ল্যাথওয়েল (বয়স ২১), গ্রাহাম থর্প (২৩), মার্ক ইলট (২২) এবং মার্টিন ম্যাককেগ (২৪)। এছাড়া তিন বছর পর দলে নিয়ে আসেন নাসের হুসেইনকে।

england

এছাড়া ইংল্যান্ড দলে অ্যান্ডি ক্যাডিক এবং পিটার সাচ তখন তাদের মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলছিলেন। গ্রাহাম থর্প ২০ বছর পর প্রথম ইংলিশ অভিষেককারী হিসেবে শতরান করেন। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল।

১৯৯৬: কেভান জেমসের অবিশ্বাস্য বোলিং

১৯৯৬ সালে দিনটা ছিল শুধুমাত্র হ্যাম্পশায়ারের কেভান জেমসের। তার জন্য ১ জুলাই দিনটিকে বলা হচ্ছিল, রোদে একজন ভ্রমণকারীর দিন। সাউদাম্পটনে ভারতের বিপক্ষে একটি ট্যুর ম্যাচ চলছিল। ওই ম্যাচে তিনি টানা চার বলে চার উইকেট নিয়েছিলেন। ‍শুধু তাই নয়, এরপর একটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে এখনও এমন কীর্তির স্রষ্টা একমাত্র খেলোয়াড় তিনি।

১৯৯৪: ড্যারেন গফের তারকা হিসেবে জন্ম

ইংলিশ পেসার ড্যারেন গফের অভিষেক টেস্ট ছিল সেবার। অভিষেকের ক্যাপ মাথায় তোলেন ৩০ জুন। অভিষেকের দিন সাইডলাইনে দর্শক হয়েই বসে থাকতে হয়েছে। বসে বসে মাইক আথারটনদের ব্যাটিং দেখেছিলেন।

দ্বিতীয়দিন ছিল ১ জুলাই। এই দিনই সুযোগ পান নিজেকে প্রকাশ করার। প্রথম সুযোগেই তিনি প্রমাণ করে দেন, ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করতেই এসেছেন। ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তোলেন। ১০৯ ছক্কা খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস। উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি জানিয়েছে, ‘গফ এমনভাবে খেলছিলেন, যেন তিনি প্রতি শনিবার বিকেলে নিয়মিত এই ম্যাচগুলিই খেলে থাকেন।’

একই দিন বল হাতে নিয়ে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন মার্ক গ্রেটব্যাচ এবং স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের। প্রথম ইনিংসে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বলা যায়, ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই একজন বড় তারকা জন্ম নেয়।

২০২২: স্পিনে নাকাল হয়েছিল শ্রীলঙ্কা

গলে প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা দুবার শ্রীলঙ্কাকে ২১২ ও ১১৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলো। এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ছিলেন নাথান লায়ন, ১১ বছর আগে এই মাঠেই অভিষেক হয়েছিল তার। প্রথম ইনিংসে তিনি ২০তম পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। নিরোশান ডিকভেলার প্রাণবন্ত ফিফটিও যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। কারণ বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া ৩২১ রানে থেমে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে, লায়ন ৩১ রানে ৪ উইকেট এবং ট্র্যাভিস হেড ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ২৩ ওভারেরও কম সময়ে স্বাগতিকদের গুঁড়িয়ে দেন।

১৯৩৫: দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক জয়

১৯৩৫ সালের ১ জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করে। লর্ডসে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে তারা ইংল্যান্ডকে ১৫৭ রানে পরাজিত করে। এটি ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের ১৮তম টেস্ট ম্যাচে প্রথম জয়, যা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০০: সনৎ জয়সুরিয়ার দুর্দান্ত ইনিংস

২০০০ সালের ১ জুলাই, শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরক ব্যাটার সনৎ জয়সুরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্টে ১৫৬ বলে ১৪৮ রানের একটি দ্রুতগতির ইনিংস খেলেন। এই ইনিংসটি শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৯৪: দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন

১৯৯৪ সালের ১ জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকা দীর্ঘ ২৯ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে আবার ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলতে ফিরে আসে। রাজনৈতিক কারণে (আপারথাইড নীতির জন্য) টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ থাকার পর এটি ছিল তাদের ফিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

১৯৮১: ইয়ান বোথামের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন

১৯৮১ সালের ১ জুলাই, হেডিংলেতে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২২৭ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো-অনে পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৩৫ রানে থাকা ইংল্যান্ডকে ইয়ান বোথামের অপরাজিত ১৪৯ রান এবং বব উইলিসের ৮ উইকেটের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয়। এটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ফলো-অন থেকে জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

এইদিনে ক্রিকেটারদের জন্মদিন

১৮৪৯: জন সেলবি (ইংল্যান্ড)
১৯২৫: ফ্র্যাঙ্ক লোসন (ইংল্যান্ড)
১৯৩৮: চেস্টার ওয়াটসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৯৬১: নীলিমা জোগালেকার (ভারত)
১৯৬৩: সাজিদ আলি (পাকিস্তান)
১৯৬৯: গ্রাহাম লয়েড (ইংল্যান্ড)

আইএইচএস/

Read Entire Article