সমুদ্রের জীবন্ত ইতিহাস ভ্যাকিটা

2 hours ago 4

সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত জীববৈচিত্র্য শুধুই আমাদের কল্পনার রাজ্য নয়, এর পেছনে আছে গভীর রহস্য। এটি এমন একটি পৃথিবী, যেখানে প্রতিটি প্রাণী তার অস্তিত্বের মাধ্যমে তার অবদান রাখে। কিন্তু এই জগতের কিছু বাসিন্দা আজ বিপন্ন। তাদের হারিয়ে যাওয়ার হুমকি ছড়িয়ে পড়েছে সমুদ্রের সীমানায়। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রাণী হলো ভ্যাকিটা। এই প্রাণীটি একসময় প্রাচীন সাগরের মিষ্টি ছায়ায় জীবনযাপন করত, কিন্তু এখন এক কঠিন সংকটে।

ভ্যাকিটা বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘ফোকোইনা সাইনাস’ নামে পরিচিত। একটি ছোট ধরনের ডলফিন যা মূলত মেক্সিকোর ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের সীমিত অঞ্চলে বাস করে। এই প্রাণীটির আকার অত্যন্ত ছোট। এরা গড়ে ৪-৫ ফুট লম্বা এবং প্রাপ্তবয়স্ক ভ্যাকিটার ওজন প্রায় ৪০-৫৫ কেজি হয়ে থাকে।

এদের শরীরে কালো বৃত্তাকার চোখের আশপাশে সাদা রেখা থাকে, যা তাদের আলাদা পরিচিতি দেয়। নরম ত্বক, ছোট মুখ, এবং স্নিগ্ধ আচরণ এই প্রাণীটিকে সাগরের শান্তিপূর্ণ সত্তা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।

ভ্যাকিটা পৃথিবীজুড়ে শুধু মেক্সিকোর ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের খুব সীমিত অঞ্চলে দেখা যায়। এই অঞ্চলটি মেক্সিকোর গুলফ অব ক্যালিফোর্নিয়া বা বাক্যাল সি। যেখানে প্রায়ই সমুদ্রের গভীরে বাস করা এই বিরল প্রাণীটি দেখা যায়। এটি শুধু এই নির্দিষ্ট জায়গার সাগরে বাস করে এবং তার বাসস্থান বাঁচানোর জন্য এখন নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

তবে কিছু বছর আগেও যেই সমুদ্র ছিল তাদের অভয়ারণ্য, সেই সমুদ্রই আজ তাদের জন্য বিপদের কারণ। বর্তমান সময়ে ভ্যাকিটার সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১৫টি, যা একসময় ছিল কয়েক হাজার। এর কারণ খুঁজলে আমরা দেখতে পাই মানুষের ক্রমবর্ধমান কার্যক্রম। বিশেষ করে অবৈধ মাছ ধরা এবং সাঁতারী থলি চুরির জন্য ব্যবহৃত জালগুলো, যার ফলে ভ্যাকিটা অনেকসময় এর ফাঁদে আটকে পড়ে। এটি শুধু তাদের জীবনসংগ্রামের অংশ নয়, সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে বিপন্ন করার একটি বিপজ্জনক দিক।

ভ্যাকিটা প্রধানত সমুদ্রের গভীরে বিচরণ করে, যেখানে তারা খাবারের জন্য ছোট মাছ এবং শামুক খায়। এর জীবনযাত্রা বেশ শান্ত, তবে এখন তাদের অস্তিত্ব সংকটে। মেক্সিকো সরকার এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থাগুলো এর সংরক্ষণে একযোগে কাজ করে আসছে। ‘ভ্যাকিটা সিপিআর’ প্রকল্পের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক দলগুলো ভ্যাকিটাদের রক্ষা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তা সত্ত্বেও অবৈধ শিকার এবং সমুদ্রের দূষণের ফলে তাদের সংখ্যা কমতে কমতে ক্রমশ প্রায় বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে।

ভ্যাকিটাকে রক্ষা করতে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চোরাশিকারী জালগুলো বন্ধ করার জন্য মেক্সিকো সরকারের কঠোর আইন প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভ্যাকিটা রক্ষায় কাজ চলছে। তবে সময় যে খুব বেশি নেই, তা পরিষ্কার। এই পৃথিবী যদি ভ্যাকিটাকে হারিয়ে ফেলে, তবে সমুদ্রের জীবন্ত ইতিহাস একদিন শুধুই স্মৃতির মধ্যে বন্দি হয়ে যাবে।

সূত্র: ডাব্লিউ ডাব্লিউ এফ, এনওএএ, আইডব্লিউসি, এমএমসি, দ্য ওশেন ফাউন্ডেশন

কেএসকে/জিকেএস

Read Entire Article