সমুদ্রের ডাক আর নোনাজলের স্মৃতি

ক্লান্ত অফিসফেরত মানুষ, ঢাকার চেনা জ্যামে বাঁধা আমার রোজনামচা। কিন্তু ১১ নভেম্বর সেইসব ক্লান্তি ধুয়ে দিতে ডাক দিলো বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত প্রাণের কক্সবাজার! সঙ্গে জীবনসঙ্গিনী ঐশী বিল্লাহ ও কলিজার টুকরা মাহিরা আসমানী ইয়ানা। রাত জেগে প্রস্তুতি, সকালে তড়িঘড়ি ছুটে চলা বিমানবন্দরের দিকে। বিমানে যখন রওয়ানা দিলাম; তখন যেন মুক্তির এক ডানা মেলে ধরলাম আমরা তিনজন। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট, অনুভবে সীমাহীন নীলিমা। মাটির বাঁধন ছিঁড়ে, তুলোর মতো মেঘে ভেসে চলা। এ যেন জীবন থেকে নেওয়া এক স্বল্প সময়ের নিবিড় মুক্তি, যেখানে আকাশ শুধু আমার! গন্তব্যে পৌঁছতেই মনটা কেমন করে উঠল। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল হোটেল ওশান প্যারাডাইস ফাইভ স্টারের রাজকীয় বাহন। হোটেলের দরজায় উষ্ণ অভ্যর্থনা, ঠান্ডা ওয়েলকাম ড্রিঙ্কে মনটা জুড়িয়ে গেল। হাতে সময় তখনো অনেক। তাই দুপুর ২টায় চেকইনের অপেক্ষায় না থেকে, সমুদ্রের সেই আদিম টানে সোজা ছুটলাম বালুকাবেলায়। ঢেউয়ের প্রথম স্পর্শে মাহিরা তো আনন্দে আত্মহারা! নোনাজলে পা ভিজিয়ে, কিছুটা সময় প্রকৃতির বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি

সমুদ্রের ডাক আর নোনাজলের স্মৃতি

ক্লান্ত অফিসফেরত মানুষ, ঢাকার চেনা জ্যামে বাঁধা আমার রোজনামচা। কিন্তু ১১ নভেম্বর সেইসব ক্লান্তি ধুয়ে দিতে ডাক দিলো বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত প্রাণের কক্সবাজার! সঙ্গে জীবনসঙ্গিনী ঐশী বিল্লাহ ও কলিজার টুকরা মাহিরা আসমানী ইয়ানা। রাত জেগে প্রস্তুতি, সকালে তড়িঘড়ি ছুটে চলা বিমানবন্দরের দিকে।

বিমানে যখন রওয়ানা দিলাম; তখন যেন মুক্তির এক ডানা মেলে ধরলাম আমরা তিনজন। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট, অনুভবে সীমাহীন নীলিমা। মাটির বাঁধন ছিঁড়ে, তুলোর মতো মেঘে ভেসে চলা। এ যেন জীবন থেকে নেওয়া এক স্বল্প সময়ের নিবিড় মুক্তি, যেখানে আকাশ শুধু আমার!

গন্তব্যে পৌঁছতেই মনটা কেমন করে উঠল। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল হোটেল ওশান প্যারাডাইস ফাইভ স্টারের রাজকীয় বাহন। হোটেলের দরজায় উষ্ণ অভ্যর্থনা, ঠান্ডা ওয়েলকাম ড্রিঙ্কে মনটা জুড়িয়ে গেল। হাতে সময় তখনো অনেক। তাই দুপুর ২টায় চেকইনের অপেক্ষায় না থেকে, সমুদ্রের সেই আদিম টানে সোজা ছুটলাম বালুকাবেলায়। ঢেউয়ের প্রথম স্পর্শে মাহিরা তো আনন্দে আত্মহারা! নোনাজলে পা ভিজিয়ে, কিছুটা সময় প্রকৃতির বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।

jagonews

দুপুরের খাবার ছিল কক্সবাজারের আসল ‘স্বাদ-বিলাস’! তাজা কোরাল মাছ, মুচমুচে লইট্টা ফ্রাই, সাথে ১০-১৫ রকমের বাহারি ভর্তা! এমন ভাতের আয়োজন দেখে মনে হলো, এটাই তো আমাদের বাঙালির প্রাণের খাবার। তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে ফিরলাম হোটেলে, ৫১৪ নম্বর সুপার ডিলাক্স ভিআইপি কিং সাইজ রুমে। পাপড়ি দিয়ে সাজানো আমাদের সেই ‘রাজকীয় নিশিযাপনের ঘর’–সত্যিই ছিল এক অসাধারণ উপহার, যার জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ।

ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীরটা বিছিয়ে দিলাম, যেন শরীর আবার সতেজ হলো। সন্ধ্যায় ছুটলাম কক্সবাজার ফিশ ওয়ার্ল্ডে, যেখানে কাচের আড়ালে নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের রঙিন মেলা। রাতে হোটেলে ফিরে প্রিয়জনের সাথে ডিনার সেরে শান্তির ঘুম। কানে বাজছিল সমুদ্রের অবিরাম গর্জন।

দ্বিতীয় দিন সকালের শুরুটা ছিল রাজকীয়–হোটেলের বুফে নাস্তা। তারপর সুইমিংপুল, জিমের সুবিধা–সবই ছিল কমপ্লিমেন্টারি! এই আতিথেয়তা যেন আমাদের ভ্রমণ আরও মধুময় করে তুললো।

jagonews

সৈকতে নেমে শুরু হলো পারিবারিক আনন্দ-উৎসব। ফটোশুট হলো শত শত, যা বাঙালির ভ্রমণকাহিনির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাহিরা ঘোড়ার পিঠে, আর আমরা নিলাম রোমাঞ্চকর প্যারা-রাইডিংয়ের স্বাদ। এসব রোমাঞ্চ শেষে হোটেলে ফিরে মন ভরে সুইমিংপুলের শীতল জলে ডুব দিলাম।

আরও পড়ুন
শান্তির আশ্রয় কুয়ালালামপুরের তিতিওয়াংসা পার্ক 
শীতকালে ভ্রমণের সুবিধা-অসুবিধা কী? 

বিকেলে আবার সেই আরামের ঘুম। রাতে বের হলাম। কেননা সমুদ্রসৈকতের রাতের খাবারের আকর্ষণ কি ভোলা যায়? সামুদ্রিক মাছ, ভর্তা, ভাজি–একই স্বাদের পুনরাবৃত্তি কিন্তু প্রতিবারই যেন নতুন তৃপ্তি!

jagonews

তৃতীয় দিন ছিল প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা। গন্তব্য পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর পথ–মেরিন ড্রাইভ, টেকনাফ। একদিকে উত্তাল সমুদ্র, অন্যদিকে সবুজ পাহাড়! সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য! ঢেউ, সমুদ্র, পাহাড়–প্রকৃতির এই তিন রূপ একসঙ্গে দেখলাম। পথের পাশে দুপুরের খাবার–আবারও সেই সামুদ্রিক মাছ, ভর্তা ও বাহারি স্বাদের ভাজি। বাঙালিয়ানা মন! এমন স্বাদের কাছে আর কোনো খাবারই টেকে না!

এরপর দেখা হলো ঝাউবন আর প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি কাঁকড়ার চর। ফিরতে ফিরতে রাত হয়, কারণ ফেরার পথে আমাদের থামতেই হলো শুঁটকির চরে। বাঙালি মসলার অবিচ্ছেদ্য অংশ! আর বার্মিজ বাজারে। মেয়ের জন্য আচার আর ঘরের জন্য কিছু বার্মিজ শোপিস ও শুঁটকি কেনা হলো। কেনাকাটা ছাড়া কি আর ভ্রমণ শেষ হয়?

চতুর্থ দিন ফেরার পালা। সমুদ্রের মায়ায় জড়িয়ে ছিলাম। তাই সকালে ঘড়ির অ্যালার্ম বাজলেও ওঠা হলো না। যখন উঠলাম; তখন মনটা ভার। তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে, শেষবারের মতো সৈকতের বাতাস নিলাম। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে, স্মৃতির ভান্ডার নিয়ে ধরলাম স্লিপার বাস–কক্সবাজার থেকে ঢাকা।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, জ্যাম ঠেলে রাত ২টায় যখন কাঙ্ক্ষিত ঢাকার বাসায় পৌঁছলাম; তখন শরীর ক্লান্ত কিন্তু মনটা সতেজ। কক্সবাজারের নোনাজল আর উষ্ণ বালি, আমাদের পারিবারিক ফ্রেমে আরও অনেক রঙিন ছবি এঁকে দিলো। এই স্মৃতিই তো আমাদের জীবনের সেরা সঞ্চয়!

সবশেষে বলতে চাই, ভ্রমণকাহিনি আমি মনে করি বাঙালি জীবনের গল্প, খাবার ও আবেগের সাথে মিশে আছে। আপনি কী মনে করেন?

এসইউ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow