আমাদের জানার বহর এত ছোট্ট যে একটুকেই অনেক বড় ভাবতে শুরু করি। কেউ ছোট খাট কৃতিত্ব দেখালেই এর-ওর সাথে তুলনায় বসে যাই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যার সাথে তুলনা করলাম তিনি ওই মানের কিনা? সে সব আমরা জানিও না, বুঝিও না। ধারও ধারি না।
গত দু’দিন ধরেই দেখছি ইমরুল কায়েসকে নিয়ে স্টোরির পর স্টোরি। কোনো সন্দেহ নেই, ইমরুল আমাদের দেশের ওয়ান অফ দ্য মোস্ট সাকসেসফুল ওপেনার। যার ট্র্যাক রেকর্ডই বলে দেয় হাউ গুড হি ওয়াজ। ইনফ্যাক্ট হি ইজ ওয়ান অফ মাই ফেবারিট ক্রিকেটার।
ইমরুলের বিনয়, সৌজন্যতাবোধ মনে রাখার মত। এখনো মনে আছে, ২০১৬ সালে ভারতে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরছি। বিমান বন্দরে আমার হ্যান্ড লাগেজটার ওজন ৪/৫ কেজি বেশি হয়েছিল। বিনয়ী ইমরুলও সপরিবারে দেশে ফিরছিলেন। আমার লাগেজের ওজন বেশি দেখে নিজ থেকে এগিয়ে এসে তার স্ত্রীর হাতে আমার হ্যান্ড লাগেজটা দিয়ে সরাসরি বিমানে তুলে দিলেন। সেদিন ইমরুলের সে বিনয়, সৌজন্যতাবোধ দেখে অবাক হয়েছিলাম। কাজেই ক্রিকেটার ইমরুলের পাশাপাশি মানুষ ইমরুলের ওপরও একটা অন্যরকম দূর্বলতা আছে আমার।
সর্বোপরি টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরের সময়ে গত ২০ বছরে দেশে যে ক’জন ওপেনার এসেছেন ইমরুল তাদের অন্যতম সেরা ওপেনার। দেশের ক্রিকেটের সব সময়ের নাম্বার ওয়ান ওপেনার তামিম ইকবালের অলটাইম ফেবারিট ওপেনিং পার্টনার ইমরুল। তামিম বহুবার মিডিয়ায় বলেছেন, তার বেস্ট পার্টনার ইমরুল। ইমরুলের সাথে তার কেমিস্ট্রিটা দারুণ এমন কথাও তামিমের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেকবার।
অনেকদিন খেলার পর অবশেষে লংগার ভার্সন থেকে বিদায় নিয়েছেন এ বাঁ-হাতি ওপেনার। তার ক্যারিয়ারের প্রতি আমার রেসপেক্ট আছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইমরুলকে চিনি। সম্ভবত ২০০৬-২০০৭ কিংবা ২০০৮ সালে এক বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয়-ছয়টি সেঞ্চুরি আছে ইমরুল কায়েসের।
একই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে দুইবার ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার জেতার দূর্লভ কৃতিত্বটিও প্রথম ইমরুলের। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার দু’দুটি ম্যাচ জেতানো ফিফটি প্রেস বক্সে বসে চোখের সামনে দেখেছি।
আর ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৯০ প্লাস রানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় তামিম ইকবালের সাথে ইমরুলের সংগ্রামি ১৫৮ রানের ইনিংসটি এখনো দাগ কেটে আছে মনে। ৩১২ রানের জুটি গড়েছিলেন সেদিন তামিম আর ইমরুল। সম্ভবত সেটাই টেস্টে ইমরুলের সেরা ইনিংস।
জাতীয় লিগে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলার পর মিডিয়া সেশনে ইমরুল বলেছেন, তিনি এখন নিজেকে অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ড করতে চান। গত ২ বছর ধরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া-আসার মধ্যেই আছেন।
তার স্ত্রী ও সন্তান অস্ট্রেলিয়াতেই থাকেন। তিনিও পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়াই থাকতে চান। সেখানে একটি ক্রিকেট কোচিং একাডেমিও করতে চান। সেখানে শেন ওয়াটসনের সম্পৃক্ততার কথাও ভাবছেন। এগুলো সবই ইমরুলের পরিকল্পনা। সময়ই বলে দেবে এর কোনটা বাস্তব রুপ পাবে, আর কোনটা পাবে না। তবে দেশের অগণিত ক্রিকেট অনুরাগির সাথে আমিও ইমরুল কায়েসের নতুন ইনিংসের সাফল্য কামনা করছি।
যদি তাই হয়, তাহলে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, অভিষেক টেস্টের শতরানকারী আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার মাহবুবুর রহমান সেলিমের পর ইমরুল কায়েস হবেন বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে যাচ্ছেন এবং সেখানে ক্রিকেট কোচিংয়েও জড়াবেন।
খুব ভাল কথা। বলে রাখা ভাল বুলবুল অনেক আগেই অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ড হন এবং অস্ট্রেলিয়ায় কোচিং করেই পরবর্তীতে তিনি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। মাহবুবুর রহমান সেলিমও অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক ক্রিকেটে প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
কিন্তু গত দুইদিন ফেসবুক, অনলাইন আর ইউটিডব দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের আর কেউ কখনো অস্ট্রেলিয়ায় যাননি। আর কেউ কোচিং করেননি অস্ট্রেলিয়ায়।
অথচ আমাদের ফেসবুক প্রজন্ম শুনলে বা জানলে অবাক হবেন এক শ্রীলঙ্কার অর্ধশতাধিকের ওপর ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। যার একটা বড় অংশ আবার ৮০ ও ৯০ দশকের বড় সময় ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ খেলে গেছেন। সে তালিকায় টিএল ফার্নান্দো, রদ্রিগো, অথুলা সামারাসেকেরা, কীর্তি রানাসিংহে, ব্রায়ান রাজা দুরাই এবং ডুমিন্ড পেরেইরাসহ ঢাকা লিগ মাতানো এক লঙ্কান সাবেক ক্রিকেটারের নিবাস এখন অস্ট্রেলিয়া।
খুব ভাল মনে আছে, ২০১৭ শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে মাঠে বসে কথা হচ্ছিল ৯০ দশকে মোহামেডানের হয়ে খেলা লঙ্কান বাঁ-হাতি টপ অর্ডার গুরুগের সাথে। তিনি এক বসায় অন্তত ১৫-২০ লঙ্কান ক্রিকেটারের নাম বলে দিয়েছিলেন, যারা তখনই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি। কাজেই অনুরোধ, আগে জানুন। দেন নিজের মতামত প্রকাশ করুন।
এআরবি/আইএইচএস