‘সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন?’

10 hours ago 4

জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সপ্তম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর।

জবানবন্দিতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএনের সদস্য অজয় ঘোষ বলেছেন, এডিসি আক্তার স্যার আমাদের সবাইকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দেন। আমি গুলি করতে চাইনি। এতে স্যার আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সাক্ষীদের জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর।

১৫তম সাক্ষী অজয় ঘোষ বলেন, তিনি ১৩-এপিবিএনের সদস্য এবং উত্তরায় কর্মরত। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ভোরে পিওএম মিরপুর পুলিশ লাইন থেকে আমিসহ ২০ জন অস্ত্র, গুলি, হেলমেট ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে রওয়ানা হই। শাহবাগ থানায় গিয়ে রিপোর্ট করি। সকাল ৯টার দিকে এডিসি শাহ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম আমাদের ব্রিফিং করে জানান, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী থানায় এসে আন্দোলনকারীদের সরাসরি গুলি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদ স্যারও উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমরা এডিসি আক্তার স্যারের নেতৃত্বে শহীদ মিনার এলাকায় যাই। সেখানে এডিসি আক্তার স্যারের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা ফায়ার করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের পাশে চাঁনখারপুল চৌরাস্তার মোড়ে আমরা অবস্থান করি। অলিগলিতে তখন হাজার হাজার ছাত্র-জনতার ভিড় ছিল। তারা শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ঐ দিন ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এবং সরকার ঘোষিত কারফিউ ছিল। আমার নামে একটি চাইনিজ রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি ইস্যু করা ছিল, তা আমার সঙ্গে ছিল। এডিসি আক্তার স্যার আমাদের সবাইকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণের নির্দেশ দেন। আমি গুলি করতে চাইনি। এডিসি আক্তার স্যার আমাকে ‘বাইনচোদ, কুত্তার বাচ্চা’ বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন? এডিসি আক্তার স্যার আমার হাতে থাকা চাইনিজ রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজনের হাতে দেন। সুজনের হাতে থাকা ঢাল লাঠি আমার হাতে দেন। কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, নাজিমউদ্দিন রোড, নবাবকাটারা, বকশি বাজার মোড়ে অবস্থানরত ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। আমি পাশে দাঁড়িয়ে তাদের গুলি করতে দেখি। পরে জানতে পারি সেখানে ৬ থেকে ৭ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

অজয় ঘোষ আরও বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারি যে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তখন আমরা চাঁনখারপুল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে শাহবাগ থানার পেছন দিয়ে থানায় প্রবেশ করি। কনস্টেবল সুজনকে খুঁজে বের করে তার কাছে থাকা আমার নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র ও গুলি নিয়ে শাহবাগ থানায় জমা দেই। ১৮ রাউন্ড গুলি জমা দেই। কনস্টেবল সুজন জানান, বাকি ২২ রাউন্ড গুলি তিনি এডিসি আক্তার স্যারের নির্দেশে ফায়ার করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিভিল পোশাকে থানার পেছন দিয়ে বের হয়ে ছাত্র- জনতার সঙ্গে মিশে আমার গ্রামের বাড়ি চলে যাই।

এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস

Read Entire Article