অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত টাইমফ্রেমে বিএনপি নির্বাচনের জন্য তাদের প্রত্যাশিত ‘যৌক্তিক সময়’ দেখতে পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এনডিএমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি, সংস্কারসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে সময়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এটা আমাদের জানা ছিল না, এটা নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা হয়নি। সুতরাং ওই সময় নিয়ে আমরা অবগত নই। কী কারণে দীর্ঘ সময় নিয়ে টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে, এটার আমরা কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এটার কারণ হিসেবে অনেকে অনেক কথা বলছে। ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য আমরা যে যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছিলাম, এটাতে আমরা সেই যৌক্তিক সময় দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, নির্বাচনমুখী সংস্কার এখন সবচেয়ে জরুরি, সেটা সম্পন্ন হয়ে এখন আমাদের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর সংস্কার মূলত হতে হবে জনগণের আস্থা, সমর্থন ও ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত সংসদে। নির্বাচনের আগে এখন উনারা কী সংস্কার করতে পারবেন, সেটা দেখার বিষয়। যেসব বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐক্যমত হয়েছে, সেসব বিষয়ে সংস্কার হতে পারে। আর যেগুলোতে ঐক্যমত হবে না, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সেটা করতে হবে। সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ সংস্কারে আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেটা আমরা করব। এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। জাতীয় সরকারের মাধ্যমে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণ নেই। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আগামী নির্বাচন, যেটার জন্য দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ তৈরিতে বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদার গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে চাই। অনেক সংঘর্ষ হয়েছে, দেশের মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সাংঘর্ষিক রাজনীতি যেন বাংলাদেশে আর কোনো দিন ফিরে না আসে, আমরা সেই চেষ্টাটা করে যাচ্ছি। সেটা সফল হবে, একমাত্র দ্রুত একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ গঠন করবে। যে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জনগণের কাছে যাদের জবাবদিহিতা থাকবে। রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে বারবার যেতে হবে, সে ধরনের গণতান্ত্রিক অর্ডার দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। একমাত্র যার মাধ্যমে সম্ভব সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা, একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়া।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠন করা, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। বাকি যারা কথা বলছেন, উনারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। যারা দায়বদ্ধ থাকবে না, তারা কে কী ভাবছে- সেটা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই।
দেশের চলমান রাজনৈতিক ও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গত শনিবার থেকে শরিকদের সঙ্গে ফের ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এ দিন এনডিএমের সঙ্গে বৈঠকের পর মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সাথেও বৈঠক করে বিএনপি।