সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

17 hours ago 8

সাতক্ষীরার তালায় অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য আড়াল করতে সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে। বোরবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তালা ইউএনওর কক্ষে পত্রিকার বিজ্ঞাপনের লটারির সময় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনা জানতে পেরে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, বোরবার সন্ধ্যায় তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পত্রিকার বিজ্ঞাপন লটারি অনুষ্ঠানে তালার কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, আওয়ামী লীগপন্থী ও আওয়ামী লীগ মালিকানা এমন কোনো মিডিয়াকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে না। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করায় ব্যক্তিগত আক্রোশে একটি চক্রকে ওই সাংবাদিকদের দিকে ইশারা করে দেন ইউএনও। এরপরই ওই সাংবাদিককে হেনাস্তাসহ অপমান-অপদস্ত করে বের করে দেয় চক্রটি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সাংবাদিকের সঙ্গে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।

ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মী জানান, ইউএনও শেখ রাসেল তালা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর কেনাকাটাসহ সামগ্রিক কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিছুদিন ধরে। বিষয়টি নিয়ে স্বয়ং ইউএনও বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব সাংবাদিকের উপস্থিতিতে আজ এভাবে অপমান-অপদস্ত করেছেন। প্রকৃত অর্থে তিনি যোগদানের পর বেশ কয়েকটি বিষয়ে অনিয়ম হয়েছে, সেই অনিয়মের বিষয়টি ঢাকতে তার নির্দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী সেলিম হায়দার বলেন, পত্রিকার বিজ্ঞাপন নামে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, সেটা সঠিক হয়নি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা পত্রিকার মালিক হলে কেন বাদ দিতে হবে? যে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, সে দুটি পত্রিকার মালিকও আওয়ামী লীগের। বিজ্ঞাপনের লটারির কথা বলে গভীর রাত পর্যন্ত সাংবাদিকদের বসিয়ে রাখাও যথেষ্ট অপমানের।

স্থানীয় এম এ ফয়সাল নামে এক সংবাদকর্মী বলেন, এর আগেও বিজ্ঞাপনের লটারি হয়েছে, কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। মালিক রাজনৈতিক দলের হলেও পত্রিকা কোনো দলের হয় না। আজকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং একজন সাংবাদিকের সঙ্গে আরেকজন সাংবাদিকের অভদ্রতা খুবই দুঃখজনক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে তালা ইউএনওর নাম রাখা হয় শেখ মো. রাসেল। তারা আত্মীয়স্বজনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তা ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে একটি তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। পরে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন তিনি। এখানে যোগদানের পর থেকে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মিশনে নামেন। মিশন বাস্তবায়ন করতে নানা বিতর্কিত কাজে নিজেকে জড়িয়েছেন।

অভিযোগ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, কোনো সাংবাদিকের ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কিছু করা হয়নি। আমার কক্ষে যেটি হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। ঘটনার পর আমার অফিসের স্টাফ দ্বারা ওই সাংবাদিককে ডাকার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফিরোজ সরকার বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ সময় তিনি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

Read Entire Article