সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর নামে আরও ৩ মামলার অনুমোদন

10 hours ago 10

সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ঘুস আদায় ও আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক তিনটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী গত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আগে ইউসিবির চেয়ারম্যান ছিলেন। বিতর্কের মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সময় তার স্ত্রী রুকমিলা জামান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। স্ত্রী রুকমিলা চেয়ারম্যান হলেও আদতে নেপথ্যে থেকে ব্যাংকটি চালাতেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে গ্রাহকের কাছে থেকে শত কোটি টাকার ঘুস নিয়ে ঋণ অনুমোদন করান সাইফুজ্জামান চৌধুরী। দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম মামল অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমান এই আদেশ দেন।

অনুমোদি মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইউসিবি পিএলসির আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঘুস নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। ঘুষ নেওয়ার আগে সাইফুজ্জামান তার স্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের হিসাব নম্বরে ২০১৯ সালের ১৮ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করান। এ ছাড়া একই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ধাপে আরও ২০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি, ২৪ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি, ২৫ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি, ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি করে দুই চেকে ১০ কোটি এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি টাকাসহ মোট ৫৫ কোটি টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে নথিপত্রে।

ওয়াল মার্টের কাছ থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কর্মচারী মো. আব্দুল আজিজের নামে ইউসিবির সদরঘাট শাখায় খোলা ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামীয় প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৫ কোটি টাকা জমা করা হয়। তবে এর আগে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি ইউসিবির জুবিলী শাখার গ্রাহক ওয়াল মার্ট লিমিটেডের এমডি সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ব্যাংকটি থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। নথিপত্র বলছে, পরবর্তী সময়ে একই দিনে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৪৫৬তম বোর্ড সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়। এর দুদিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াল মার্টের হিসাবে ঋণের টাকা জমা করা হয়।

এদিকে ইউসিবি পিএলসির ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার গ্রাহক বেস্ট সার্ভিসের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকা ঘুস নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে নথিপত্রে। ঘুষ নেওয়ার আগে বেস্ট সার্ভিসের হিসাবে ২০২২ সালের ১৬ থেকে ২০ জুনের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। এরপর সেই টাকা সাইফুজ্জামানের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হিসাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৬ জুন সাইফুজ্জামানের কর্মচারীর মাধ্যমে বেস্ট সার্ভিসের হিসাব থেকে ৫ কোটি টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া ২১ জুন নগদে ইউসিবির নিকুঞ্জ শাখা থেকে ২ কোটি করে দুটি ও ১ কোটি করে একটি চেকে মোট ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। বাকি ৫০ কোটি টাকা ২২ জুন ২০২২ থেকে ৬ জুলাই ২০২২-এর মধ্যে ২১টি ট্রান্সজেকশনে সাইফুজ্জামানের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হিসাবে পাঠানো হয়।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ‘আত্মসাতের’ অভিযোগেও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। দেশে-বিদেশে সাইফুজ্জামানের নামে-বেনামে থাকা অবৈধ সম্পদের এখনো অনুসন্ধান করছে দুদক। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুখমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন।

এসএম/এমএসএম

 

Read Entire Article