‘সাক্ষ্য-প্রমাণ মূল্যায়ন ছাড়া মৃত্যুদণ্ড ছিল বিচারের নামে অবিচার’

3 months ago 10

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের মধ্য দিয়ে সত্য জয়ী হয়েছে এবং মিথ্যা পরাজিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ মূল্যায়ন না করেই এটিএম আজহারুলকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর এতিহাসে এটি বিচারের নামে অবিচার।

মঙ্গলবার (২৭ মে) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিলে এই প্রথম কেউ খালাস পেলেন।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এটিএম আজহারুলকে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে এটিএম আজহারুল ইসলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই রায়ের মাধ্যমে সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির ছয়জন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্তত পাঁচজন কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।

শিশির মনির বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান। তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। মহান আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাই। আমরা এটাও মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড অবিচারের অবসান হয়েছে, বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগ চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ মূল্যায়ন না করেই এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর এতিহাসে এটি বিচারের নামে অবিচার।

তিনি বলেন, যেসব তথ্য-প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে আজ এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে মিথ্যা পরাভূত হয়েছে। আমরা শর্ট অর্ডার চেয়েছি। এটি আদালত মঞ্জুর করেছেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আপিল বিভাগের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। বেঞ্চের সাত বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দিয়েছেন। রায়ে আপিল বিভাগ অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এরপর ওই রায় রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রিভিউ শুনানি শেষে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়া হয়। আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ৮ মে রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগ। সে অনুযায়ী আজ রায় দেওয়া হয়।

এফএইচ/বিএ/এএসএম

Read Entire Article