সাত বছরেও কাটেনি লোকবল সংকট

3 months ago 46

সাত বছর হলো মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) চালু হয়েছে। এ সময়ে এখান থেকে বহু যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ গেছেন। হয়েছেন স্বাবলম্বী। নিজেকে দক্ষ করেছেন। অথচ এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এখনো চলছে লোকবল সংকট। ৪৩টি পদের মধ্যে ৩৯টিই খালি। ফলে খণ্ডকালীন কিছু শিক্ষক দিয়ে চালাতে হচ্ছে টিটিসি’র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার কুমারটেক এলাকায় অবস্থিত এ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় ২০১৩ সালের ২ মার্চ। আর ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি উদ্বোধন হয়। ওই সময় এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌমন্ত্রী, বর্তমান মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করে মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ এবং কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো।

সরেজমিনে জানা গেছে, ৪৩টি পদের মধ্যে মাত্র চারজন আছেন। এছাড়া খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক হিসেবে ছয়জন ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একজনসহ মোট ১১ জন দিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। আর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে আছেন সাতজন। এ পদগুলো হলো- পিয়ন একজন, নিরাপত্তাকর্মী তিনজন, মালী একজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী একজন ও সুইপার একজন।

মাদারীপুর টিটিসি, সাত বছরেও কাটেনি লোকবল সংকট

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে দুই মাস, তিন মাস, চার মাস ও ছয় মাস মেয়াদি নানা ধরনের প্রশিক্ষণ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, সুইং মেশিন অপারেশন, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টেলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, সিভিল কন্সট্রাকশন, ড্রাইভিং, প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন কোর্স, জাপানি ভাষা ও হাউজ কিপিং কোর্স।

টিটিসি সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার মানুষের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকায় প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনে বেশি লোক দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশ ফেরত মানুষের জন্যও নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এখানে জাপানি ভাষাও শেখানো হয়। ছয় মাসব্যাপী এ কোর্স শেষ করে এরই মধ্যে অনেকে সরকারি অর্থায়নে জাপান যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে টিটিসির জাপানি ভাষা প্রশিক্ষক সাদিকুর রহমান বলেন, এখান থেকে জাপানি ভাষা শিখে জাপানে কাজ করার সুযোগ আছে। এরই মধ্যে এখান থেকে জাপানি ভাষা শিখে বেশ কয়েকজন সরকারি অর্থায়নে জাপান গেছেন। ভাষা শিখে বিদেশ গেলে তাদের মর্যাদা অনেক বেশি থাকে। তারা সহজেই কাজ পেয়ে যান। অর্থও বেশি আয় করতে পারেন।

সইুং মেশিন অপারেশনের প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার লাভরিন আক্তার নীলিমা বলেন, আমি এখানে গার্মেন্টসের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে চাই।

মাদারীপুর টিটিসি, সাত বছরেও কাটেনি লোকবল সংকট

কোর্সটির প্রশিক্ষক আখিনুর আক্তার বলেন, বর্তমানে এই প্রশিক্ষণে ১৫ জন আছেন। এখান থেকে অনেকেই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশ গিয়ে আয় করছেন। অনেকেই আবার দেশে বসেও আয় করতে পারছেন। ট্রেনিংয়ের পর আমরা যে সার্টিফিকেট দেই, তা নিয়ে বিদেশ গেলে বেশি আয় করা সম্ভব।

টিটিসিতে প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন শামীম। তার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে। তিনি বলেন, আমি প্রথমবারের মতো কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছি। তাই কয়েকজনের পরামর্শে এখানে এসেছি। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গেলে ভালো হয়।

মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার আ. হামিদ। তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরব ছিলেন। আবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো যাচ্ছেন। এখানে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে। তিনি বলেন, দেশ থেকে যারা বিদেশ যান, তারা যেন কাজ শিখে ও নিয়মকানুন জেনে যান। তাহলে ভালো কিছু করতে পারবেন। এখান থেকে কাজ শিখে গেলেই তার মূল্যায়ন বেশি। তাই সবার উচিত প্রশিক্ষণ নেওয়া ও ভাষা এবং কালচারের ওপর জ্ঞান থাকা। তবেই বিদেশে বেশি আয় করতে পারবেন।

কালকিনি উপজেলার রাব্বি মুন্সি বলেন, আমি দীর্ঘদিন কাতারে ছিলাম। এখন সিঙ্গাপুরে যাবো। তাই এখানে এসেছি ট্রেনিং নিতে। ট্রেনিং নিলে বিদেশে ভালো কিছু করা যায়। সবাইকে বলবো, কেউ বিদেশ যেতে চাইলে কাজ শিখে গেলো ভালো হয়। তারা যেন টিটিসিতে এসে প্রশিক্ষণ নেন।

মাদারীপুর টিটিসি, সাত বছরেও কাটেনি লোকবল সংকট

ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশনে ট্রেনিং নিতে আসা মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমি কোর্সটি করছি। সার্টিফিকেট অর্জন করে ইউরোপের কোনো দেশে যেতে চাই।

ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশনের প্রশিক্ষক মো. নয়ন শেখ বলেন, এখানে ওয়েল্ডিংয়ের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যারা দেশে কাজ করতে চান, তারাও এখান থেকে কাজ শিখে ভালো কিছু করতে পারেন। এছাড়া যারা দেশের বাইরে যেতে চান, তারাও প্রশিক্ষণটি নিতে পারবেন।

টিটিসি থেকে তিনমাসের কোর্সে ড্রাইভিং শিখছেন মাদারীপুরের ইমন আহম্মেদ। তিনি বলেন, আমি এখান থেকে কোর্স করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছি। এখন সৌদি যাবো।

ড্রাইভিং প্রশিক্ষক মো. রুবেল রানা বলেন, আমাদের এখানে ড্রাইভিং কোর্স করে অনেকেই বিদেশ গেছেন। আবার অনেকেই শিখছেন, ভবিষ্যতে তারাও যাবেন বিদেশ। আমাদের এই কোর্সের শেষ ব্যাচের একজন ছাত্র সরকারিভাবে রাশিয়া গেছেন। তার নামমাত্র টাকা লেগেছে। সৌদি আরব, দুবাই, কাতার এমনকি ইতালিতেও অনেকে গেছেন। আমাদের এখানে কোর্স করলে সরকারিভাবেও যাওয়া যায় এবং নিজ উদ্যোগেও বিদেশ যেতে পারবেন। অনেকেই জানেন না, এখানে একটি টিটিসি আছে, এটা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলে, অল্প শিক্ষিত মানুষও দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যেতে পারবেন।

মাদারীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স. ম. জাহাঙ্গীর আখতার বলেন, শুধু মাদারীপুর নয়, সারাদেশের টিটিসিগুলোতে জনবল সংকট রয়েছে। এরমধ্যে থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। এ ব্যাপারে প্রতিমাসে এখান থেকে পাঠানো হয় রিপোর্ট। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে। তবে এখান থেকে ট্রেনিং নিলে দক্ষতা অর্জন করে দেশে এমনকি বিদেশেও ভালো কিছু করা সম্ভব।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/জেডএইচ/জেআইএম

Read Entire Article