সাতক্ষীরায় শিক্ষকদের কর্মবিরতি, সংঘর্ষের ছবি নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মারমুখী আচরণ

চার দফা দাবিতে শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে সাতক্ষীরার চারটি সরকারি স্কুলে দ্বিতীয় দিনেও বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ ছিল। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এদিকে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে মতানৈক্যের ফলে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফুটেজ নেওয়ায় সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। শিক্ষকরা বলছেন, চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি এবং দাবি পূরণ না হলে চলমান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার দাবি শিক্ষকদের। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তারের বাবা আমিনূর রহমান জানান, শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও  মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে তাদের ভবিষ্যৎ। এদিকে মঙ্গলবার বেলা এগারটার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দুটি দল তৈরি হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তা

সাতক্ষীরায় শিক্ষকদের কর্মবিরতি, সংঘর্ষের ছবি নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মারমুখী আচরণ

চার দফা দাবিতে শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে সাতক্ষীরার চারটি সরকারি স্কুলে দ্বিতীয় দিনেও বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ ছিল। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এদিকে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে মতানৈক্যের ফলে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফুটেজ নেওয়ায় সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী।

শিক্ষকরা বলছেন, চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি এবং দাবি পূরণ না হলে চলমান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার দাবি শিক্ষকদের।

সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তারের বাবা আমিনূর রহমান জানান, শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও  মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে তাদের ভবিষ্যৎ।

এদিকে মঙ্গলবার বেলা এগারটার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দুটি দল তৈরি হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েকজন আহত হয়। মারামারির ফুটেজ ফটোসাংবাদিকরা ধারণ করলে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন তেড়ে আসে। এমনকি তারা ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ সাংবাদিকদের মুছে দিতে বাধ্য করে। এতেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। 

পরে শহরের মিনি মার্কেটে অবস্থিত সাংবাদিকদের অফিসে তারা সাংবাদিকদের ওপরে চড়াও হয় ও আস্ফালন করতে থাকে। এমনকি সাংবাদিকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করতে দেখা যায় তাদের।

হাবিবুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, বছরের শেষে পরীক্ষা বন্ধ রেখে যারা ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন করছেন, তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করা। প্রথমে একটি নির্বাচিত সরকার আসুক, তারপর আন্দোলন করুন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা শিক্ষকদের রাস্তায় নামাচ্ছে, তারা প্রকৃত শিক্ষাদস্যু।

তিনি বলেন, কিছু শিক্ষক নাকি ছাত্রদের বলছে আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালে পরীক্ষা দিতে হবে না। এতে ছাত্ররা দুই দলে ভাগ হয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা গ্রহণযোগ্য নয়।

নাদিরা সুলতানা নামে এক অভিভাবক বলেন, এবার যারা এসএসসি দেবে তারা করোনার সময় পিএসসি-জেএসসি দিতে পারেনি। এখন তাদের টেস্ট পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা বন্ধ থাকলে বড় ক্ষতি হবে। পরীক্ষার দিন সকালে এসে জানতে পারছি পরীক্ষা নেই এটা অভিভাবকদের সঙ্গে তামাশার মতো। প্রয়োজনে আমরা অভিভাবকরাই পরীক্ষা নেব।

যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আকরামুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষক আমাদের ঘিরে ধরে মোবাইল কেড়ে নিয়ে সব ভিডিও ডিলিট করে দেন। জানতে চান, কে আমাদের ডেকেছে। শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন-কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণ কেন হলো, বুঝতে পারছি না।

ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি এম বেলাল হুসাইন বলেন, সংবাদ কাভার করে অফিসে ফেরার পর সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে ভিডিও ডিলিট করতে বলে, ফোন চেক করতে চায়।  আমি স্পষ্টভাবে বলি, আমি তোমাদের কোনো বিশৃঙ্খলার ফুটেজ ধারণ করিনি। পরে তারা এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের আচরণে হতবাক হয়েছি।

সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আন্দোলনকারী শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষকরা বছরের পর বছর বঞ্চনার শিকার। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেও টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড ঝুলে আছে। দাবি পূরণের নিশ্চয়তা ছাড়া পরীক্ষা নিলে সব থেমে যাবে। তাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবেই পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, ২০ তারিখ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা চলছিল। প্রস্তুতি থাকলেও আজ শিক্ষকরা পরীক্ষা নিতে রাজি হননি। পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপ হওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আমি শিক্ষকদের দাবির পক্ষে, কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন হওয়া ঠিক নয়।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি কিশোর শিক্ষার্থীরা তুচ্ছ বিষয়ে এমন ভয়ানক আচরণ করতে পারে, সেটা ভাবতেও লজ্জা লাগে।’

শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করতে জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব স্কুলে আমরা তা পাঠিয়েছি। কিন্তু কিছু শিক্ষক বলছেন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া আন্দোলন স্থগিত করতে পারবেন না। যারা পরীক্ষা বন্ধ করেছে তাদের নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও দুঃখজনক।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলেছি- পরীক্ষা অবশ্যই চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে পরীক্ষা নেননি। সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনাও দুঃখজনক। যারা এতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow