সাদা পাথর লুটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

1 month ago 19

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তরী বাংলাদেশের সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাগরিক গোলাম কিবরিয়ার পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করে ডাক ও ই-মেইলে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট দায়েরসহ অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি আইনজীবী নিজে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে জানান, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫; বাংলাদেশ পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ এবং অন্যান্য প্রযোজ্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের বিধান অনুসারে এ নোটিশটি পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের মনোরম পর্যটনকেন্দ্র, যা একসময় তার নির্মল সাদা পাথর এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ পাহাড়ি স্রোতের জন্য বিখ্যাত ছিল, এখন অবিরাম অবৈধ খননের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

সাদা পাথর প্রথম জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করে ২০১৭ সালে, যখন ধলাই নদীর তীরে ভূমিধসের ফলে পাঁচ একর জমিতে সাদা পাথর জমা হয়। বিক্ষিপ্ত লুটপাট থেকে যা শুরু হয়েছিল তা এখন পূর্ণাঙ্গ, সংগঠিত লুণ্ঠনে পরিণত হয়েছে। যা কেবল এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, বরং এর পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, সিলেটের সাদা পাথরের মজুত দেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও পরিবেশগত ভারসাম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা নির্বিচারে ও অবৈধ উত্তোলন, খনন এবং পরিবহন কার্যক্রমের কারণে গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষত পুলিশের সহায়তায় সাদা পাথর চুরি হচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীরা এই স্থানটিকে এখন ‘অচেনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যার ফলস্বরূপ নদী, পাহাড় ও জীববৈচিত্র্যের অপরিবর্তনীয় পরিবেশগত অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।

আইন অনুসারে পরিবেশগত ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। পরিবেশ-পর্যটন এবং টেকসই পাথর সংগ্রহের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, বারবার জনসাধারণের উদ্বেগ সত্ত্বেও অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারি সংস্থা হিসেবে, বাংলাদেশের সংবিধান, বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ১৮ক অনুসারে প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিবাদীদের আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নোটিশে ভোলাগঞ্জসহ সিলেটে সাদা পাথরের সব অবৈধ উত্তোলন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হোয়াইট স্টোন জমা রক্ষার জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ পরিকল্পনা শুরু করতে বলা হয়েছে।

এ নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে বিবাদীরা যথাযথ এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে রিট দায়েরসহ অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে জানানো হয়েছে।

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার জাগো নিউজকে বলেন, সিলেটে সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আশা করছি বিবাদীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া অবশিষ্ট সাদা পাথর রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে ভূমিকা রাখবে।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

Read Entire Article