সাবধান, রান্নাঘরের নীরব ঘাতক প্লাস্টিক

3 months ago 9

রোজকার জীবনে প্লাস্টিকের পাত্র অঘোষিত সহচর। খাবার সংরক্ষণ থেকে গরম করা পর্যন্ত এই পাত্রগুলোর ওপর ভরসা রাখেন অনেকেই। দেখতে চকচকে, ওজনে হালকা, দামেও সাশ্রয়ী। তাই রান্নাঘরের প্রায় প্রতিটি তাকই দখল করে রেখেছে নানা রকম প্লাস্টিকের বাটি, বাক্স কিংবা বোতল। কিন্তু জানেন কি, এই নিরীহ দেখতে পাত্রগুলোই ধীরে ধীরে আপনার শরীরে বিষ ঢালতে পারে?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের গুণমান নষ্ট হয়, ফাটল ধরে, গন্ধ আটকে যায়, এমনকি ক্ষতিকর রাসায়নিকও খাবারে মিশে যেতে পারে। ফলে হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে হরমোনে বিঘ্ন এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই রান্নাঘরের এই ‘শব্দহীন ঘাতক’ সম্পর্কে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি।

অনেক সময় আমরা দেখতে পাই, একটি পাত্র দেখতে ভালো থাকলেও তাতে খাবার সংরক্ষণ ঠিকঠাক হচ্ছে না কিংবা রান্নার গন্ধ বা দাগ কিছুতেই তুলতে পারছি না। এ ধরনের ছোট ছোট লক্ষণই কিন্তু বলে দিচ্ছে-এখনই সময় পাত্রটিকে বিদায় জানানোর। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন লক্ষণে বোঝা যাবে প্লাস্টিকের পাত্রটি আর ব্যবহারের উপযোগী নেই-

সাবধানের বার্তা দেয় ফাটল বা বেঁকে যাওয়া পাত্র

পাত্রে হালকা ফাটল কিংবা আকারে বাঁকা হয়ে যাওয়া একদমই অবহেলা করার মতো নয়। বিশেষত মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করার কারণে উচ্চ তাপমাত্রায় পাত্র বিকৃত হয়ে যেতে পারে। এতে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু সহজেই জমে গিয়ে খাবারের সঙ্গে মিশে পড়ার ঝুঁকি থাকে, যা আপনার শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পাত্রে স্থায়ী দাগ বা গন্ধ জমে থাকা

অনেকদিন ধরে একই পাত্রে তরকারি বা মসলাদার খাবার রাখার ফলে যদি দাগ বা গন্ধ থেকে যায় এবং তা বহুবার ধোয়ার পরও না যায় তবে বুঝবেন প্লাস্টিক পচতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় পাত্রটি শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও ডেকে আনতে পারে।

ঢাকনা যদি ঠিকভাবে না আটকে

একটি খাবার সংরক্ষণের পাত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—তার বায়ুরোধী ক্ষমতা। যদি ঢাকনা আগের মতো ভালোভাবে আটকানো না যায়, ফাঁক থাকে বা বাঁকা হয়ে যায়, তবে তা খাবারকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে না। এ অবস্থায় পাত্রটি আর ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

পাঁচ বছরের পুরোনো? এখনই বদলে নিন

একই প্লাস্টিক পাত্র বছরের পর বছর ব্যবহারের ফলে তা ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনি দেখতে না পেলেও এর গায়ে ছোট ছোট আঁচড় বা ক্ষত তৈরি হয়, যেখানে সহজেই ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো হলে, সেটা যত ভালো অবস্থায়ই হোক না কেন, পরিবর্তন করা ভালো।

বিপিএ বা বিসফেনল-এ থেকে সাবধান

আপনার পাত্রটি যদি পুরোনো হয় এবং ‘বিপিএ-মুক্ত’ না হয়, তবে তা এখনই ফেলে দিন। তা না হলে বিসফেনল নামক রাসায়নিক উপাদানটি উচ্চ তাপমাত্রায় খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। এটি এমন একটি যৌগ যা হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। ফলে হতে পারে হরমোন জনিত সমস্যা, এমনকি প্রজনন ক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাস্থ্যঝুঁকির পেছনের বৈজ্ঞানিক কারণ

‘পেডিয়াট্রিক এনভায়রনমেন্টাল হেলথ স্পেশালিটি ইউনিট’-এর মতে, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা দুটি সাধারণ উপাদান প্যাথালেটস ও বিসফেনলে শরীরের হরমোন নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। এস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের কার্যকারিতায় এসব উপাদান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার প্রভাব পড়ে শিশুদের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর।

প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহারে সাময়িক স্বস্তি থাকলেও, দীর্ঘ মেয়াদে এটি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই সময়মতো পুরোনো পাত্রগুলোকে বিদায় জানান এবং যাচাই করে নিন আপনার পাত্রটি আদৌ নিরাপদ কি না। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

জেএস/আরএমডি/জিকেএস

Read Entire Article