সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছর কারাদণ্ড নিয়ে শহীদ পরিবারে ক্ষোভ
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। রায়ে অপর আসামি শেখ হাসিনার সহযোগী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তৃতীয় আসামি পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড হলেও একই মামলার অন্য আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাজা হয়েছে পাঁচ বছর কারাদণ্ড। অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়ে মামলার অভিযোগ প্রমাণে ভূমিকা রাখার বিষয়টি সাবেক পুলিশপ্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন। এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপ
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। রায়ে অপর আসামি শেখ হাসিনার সহযোগী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তৃতীয় আসামি পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড হলেও একই মামলার অন্য আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাজা হয়েছে পাঁচ বছর কারাদণ্ড।
অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়ে মামলার অভিযোগ প্রমাণে ভূমিকা রাখার বিষয়টি সাবেক পুলিশপ্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
রায়ে উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ প্রমাণিত। ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি, প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল ও গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
আরও পড়ুন:
যেভাবে রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি মামুন
মামুনের রায় প্রত্যাখ্যান করছি, আমরা উচ্চ আদালতে যাবো: মীর স্নিগ্ধ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা-কামালকে ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া কী?
একই অপরাধে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আল মামুনের শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, বিচারের ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। তার অবদান স্বীকার করার সঙ্গে বস্তুগত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনায় তার সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে।
যেখানে অপরাধের সম্পৃক্ততায় সর্বোচ্চ শাস্তি, কিন্তু তার অবদান বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
রায়ে যে কারণে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির ঘোষণার সময় বলা হয়, এ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। এমনকি তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি ৩৬ দিনের আন্দালনের সব ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন।
তার অবদান, স্বীকার করার সঙ্গে বস্তুগত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনায় তার সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে। যেখানে অপরাধের সম্পৃক্ততায় সর্বোচ্চ শাস্তি। কিন্তু তার অবদান বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ মামলায় গ্রেফতার একমাত্র আসামি আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে তিনিই প্রথম রাজসাক্ষী। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জবানবন্দিতে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘ল্যাথাল উইপন’ (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে পেয়েছিলেন তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য মামলায় মোট আসামি ২৩ জন। আসামিরা সবাই পুলিশ ও র্যাবের সাবেক সদস্য।
আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব পান। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আইজিপি পদে রেখে দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে তার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। যখন দ্বিতীয়বারের মতো মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছিল, তাতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে জেরার সময় তিনি এ কথা বলেছিলেন।
তবে, ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরা। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় মেনে নিতে পারছেন না শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
তাকে অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিবারগুলো।
রায়ের পর শহীদ মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রায় এসেছে, তাতে শহীদ পরিবার ও আহতরা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সাবেক আইজিপির রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। তাকে ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক।’
শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, ‘আমরা সাবেক আইজিপির অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাই। তবে শুধু রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই, যে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনানো হয়েছে, তাদের যেখান থেকে পারবে সরকার ধরে নিয়ে আসুক এবং রায় কার্যকর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ধরে এনে ফাঁসি না দেওয়া হবে, আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো।’
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেন শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামানও।
এফএইচ/এসএনআর/এমএস
What's Your Reaction?