সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুলের মামলা বাতিল-জামিন শুনানি আজ

2 weeks ago 15

জুলাই আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলা বাতিল ও জামিন চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুলের করা আবেদনের শুনানি আজ।

রোববার (১৭ আগস্ট) এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ রয়েছে।

গত ১১ আগস্ট সাবেক প্রধানবিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের পক্ষে করা আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতকক্ষে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছিল।

এর আগে ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত ও জামিন চেয়ে সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক ৭ আগস্ট আবেদনটি করেন। এর পর সোমবার (১১ আগস্ট) কার্যতালিকায় আবেদনটি ১৮ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। বেলা তিনটার পর খায়রুল হকের পক্ষে আবেদন শুনানি করতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময়ের আবেদন জানানো হয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এরপর আদালত শুনানির জন্য রোববার (১৭ আগস্ট) দিন রেখেছেন।

আদালতে ওইদিন খায়রুল হকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, সাবেক বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, অ্যাডভোকেট শেখ আওসাফুর রহমান বুলু, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোহসীন রশিদ, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু ও অ্যাডভোকেট এবিএম সিদ্দিকুর রহমানসহ আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা ছিলেন।

আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহম্মেদ ও মো.এমরান খান রবিন , সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল উজ্জ্বল হোসেন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম উদ্দিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাফওয়ান করিম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইব্রাহিম খলিল।

বেলা তিনটার পর বিচারপতি খায়রুল হকের আবেদনটি শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান।

এ সময় এক সপ্তাহ সময়ের আরজি জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহম্মেদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় শুনানিতে অংশ নেবেন।

খায়রুল হকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি। একটি হত্যা মামলায় গত ২৪ জুলাই বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়, এক বছর আগের ঘটনা দেখিয়ে চলতি বছরের ৬ জুলাই মামলাটি করা হয়। তাকে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়, অথচ বিচার বিভাগ এ বিষয়ে নীরব।

আবেদনের শুনানি গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু করতে পারি, এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রেপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন।’ এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহম্মেদ চলতি সপ্তাহে শুনানি না করার জন্য আরজি জানান। এ নিয়ে একপর্যায়ে হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।

আদালত বারবার সবাইকে শান্ত হতে বলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে আদালত বলেন, আগামী রোববার বেলা ১১টায় আবেদন শুনানির জন্য রাখা হলো। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং আইনজীবীরা আদালতকক্ষ ত্যাগ করেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল এক সপ্তাহ সময় নেওয়ার জন্য। আমরা আদালতের কাছে আবেদন করেছি, অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য সময় চেয়েছিলাম। ওনারা (খায়রুল হকের পক্ষের আইনজীবী) ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের কথা শুনতে চাচ্ছিলেন না। জোর করে সাবমিশন রাখতে চেয়েছিলেন। পেছন থেকে অনেকে হইহুল্লোড় শুরু করে যে কেন শুনানি হবে না।’

আর খায়রুল হকের আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, ‘আড়াইটার পরে মোশন (আবেদন) যখন ধরল, তারা (রাষ্ট্রপক্ষ) তখন সময় চাইল। আদালত বেলা তিনটা পর্যন্ত সময় দেন। তিনটার সময় যখন শুনানির জন্য আমি দাঁড়াই, তখন তারা আবার বলল, অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চেয়েছেন। ১০ মিনিট অপেক্ষার পর বললেন যে অ্যাটর্নি জেনারেল নট দিস উইক (চলতি সপ্তাহে নয়) নিতে বলেছেন। আইন কর্মকর্তারা বিচ্ছিন্নভাবে তাদের ক্ষোভ (খায়রুল হক অতীতে কী করেছেন সে বিষয়ে) প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদন মঞ্জুর করে আদালত রোববার ১১টার শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।’

প্রসঙ্গত, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আলাউদ্দিন গত ৬ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় শেখ হাসিনাসহ ৪৬৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় খায়রুল হককেও আসামি করা হয়।

গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে ৩১ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়া শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। তবে খায়রুল হকের আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন চেয়ে শুনানি করেন।

আইনজীবী আরও জানান, খায়রুল হক ২০১১ সালের ১৭ জুন প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরে যান। মামলার ঘটনার দিন, অর্থাৎ ১৮ জুলাই তিনি আইন কমিশনের দাপ্তরিক কাজ শেষে পুলিশ পাহারায় নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন এবং তার বয়স ৮১ বছর। তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন এবং জামিন পেলে পলাতক হবেন না।

গত ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় খায়রুল হককে ভার্চুয়ালি গ্রেফতার দেখানো হয়। বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় দেওয়াসহ জাল রায় তৈরির অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় আদালত তাকে সাতদিনের রিমান্ডে পাঠান।

এফএইচ/এনএইচআর/জেআইএম

Read Entire Article