দেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নিতে সামাজিক সংলাপের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ জরুরি। কারণ, সামাজিক সংলাপ কারখানার মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষকে একসঙ্গে বসে সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করে। এতে কারখানায় সুস্থ ও উৎপাদনশীল পরিবেশ বজায় থাকে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখে।
সামাজিক সংলাপের সঙ্গে এক দশকের যাত্রা উপলক্ষে সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশেয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (এসটিআইটিসিএইচ)-এর সহযোগিতায় আয়োজিত সংলাপে এমন মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। ইথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই) বাংলাদেশ বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে এ সংলাপ আয়োজন করে।
এতে সরকারের প্রতিনিধি, শ্রমিক অধিকার সংগঠন, ব্যবসায়িক সংগঠন (বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ), শ্রমিক ফেডারেশন, ব্র্যান্ড, কারখানা থেকে ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধিসহ ট্রেড ইউনিয়ন ও অংশগ্রহণকারী কমিটির প্রতিনিধিরা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাসহ ১০০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
স্বাগত বক্তব্যে ইটিআই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আবিল বিন আমিন বলেন, ‘আজকের এই মাইলফলক একটি সম্মিলিত উদ্যোগ। শুধু তাই নয়, এ মাইলফলকের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয় যে- সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।’
সংলাপে বাংলাদেশ শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারপারসন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিগত এক দশকে তৈরি পোশাক কারখানায় সামাজিক সংলাপ বাস্তবায়নের যাত্রা, পাশাপাশি দীর্ঘ পথচলায় ইটিআই বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সামাজিক সংলাপ বাস্তবায়নের সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জগুলো আলোচনায় উঠে আসে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা বলেন, কারখানায় সামাজিক সংলাপ শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে। একই সঙ্গে এটি অন্তর্জাতিক ক্রেতাগোষ্ঠী এবং মালিকপক্ষের অংশগ্রহণমূলক দায়িত্ব ভাগাভাগির বহিঃপ্রকাশ। যা ব্যবসায়িক সম্ভাবনা হিসেবেও ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক সংলাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কারখানায় অভিযোগ নিরসন ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মত দেন তারা।
আইএলও বাংলাদেশের শ্রম প্রশাসন ও কর্মপরিবেশ বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরন রামজুথান বলেন, সামাজিক সংলাপ শুধু একটি কাঙ্ক্ষিত প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি অপরিহার্য।
তিনি বলেন, শ্রমিকের মজুরির মতো অপরিহার্য বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য আমাদের নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। যেখানে নারী ও তরুণ সমাজের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আরও কার্যকরী এবং শক্তিশালী জাতীয় সামাজিক সংলাপ গঠন জরুরি।
অনুষ্ঠানে কারখানার সামাজিক সংলাপ এবং তৈরি পোশাক খাতের সামাজিক সংলাপ শীর্ষক দুটি পৃথক প্যানেলে আলোচনায় মতামত তুলে ধরেন বক্তারা।
কারখানার সামাজিক সংলাপ শীর্ষক আলোচনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এমনকি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আরও শক্তিশালী করা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা ও সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তৈরি পোশাক খাতের সামাজিক সংলাপ শীর্ষক আলোচনায় তরুণ ও নারী শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের বিষয় নিশ্চিত করা ও নারী সদস্যদের গঠনমূলক অংশগ্রহণ নিয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
সামাজিক সংলাপকে এগিয়ে নিতে তরুণ ও নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়।
এমকেআর/এএসএম