সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি

1 month ago 7

সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। হাঁটু সমান পানি মাড়িয়ে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এখানে বসবাস করতে হয় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের। আর ভারী বর্ষণ হলেতো বলার অপেক্ষাই থাকে না। বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ে জায়গাটি। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনের পাশে দেওয়ালে ঘেরা তিনটি ভবনে চলে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কাজ। এখানে একজন পুলিশের উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে আটজন কাজ করেন। একটি ভবনে অফিস কার্যক্রম চললেও বাকি দুটিতে অবস্থান করেন তারা। জায়গাটি নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায়। পানি প্রবেশ করে থাকার ঘরে। কখনো কখনো হাঁটু সমান পানি অতিক্রম করে অফিস করতে হয় তাদের। জনসাধারণের নিরাপত্তায় থাকা লোকজনকে থাকতে হয় অনিরাপদ বাসস্থানে।

স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর ধরে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে থাকা সদস্যরা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আর হচ্ছে না। তাদের এ জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে অনেক সময় তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসতে লজ্জাবোধ করেন।

সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে পুলিশ ফাঁড়ি পুরোটা তলিয়ে গেছে। চারদিকের ময়লা পানি ফাঁড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে কক্ষেও প্রবেশ করেছে। থাকার জন্য প্রতিটি বেড তিন-চারটি ইট দিয়ে উঁচু করতে হয়েছে। এরপরও যেন ময়লা পানি থেকে রক্ষা হচ্ছে না। আরেকটু বৃষ্টি হলে যেন সেখানে বসবাসেরই কোনো উপায় থাকবে না।

পুলিশ সদস্যদের খাবারের জন্য ফাঁড়ির ভেতরে রান্না করতে হয় কাঠের মাচায়। সেই সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ময়লা পানিতে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় ফাঁড়িতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ডেঙ্গু ঝুঁকিতেও আছেন। যে কোনো সময়ে তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। পাশাপাশি ময়লা পানি মাড়িয়ে চলার কারণে তাদের পায়ে চুলকানিসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। মাঝে মধ্যে পানিতে আবার জোঁকের দেখা মিলে।

পুলিশ সদস্যরা জানান, ফাঁড়িতে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ‘একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ ছয়জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। এসব পুলিশ সদস্যদের এখানে নিয়মিত থাকতে হয়। একইসঙ্গে রাতেও এখানে ঘুমাতে হয়। বর্তমানে ফাঁড়িটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ময়লা পানি মাড়িয়ে একটি জরাজীর্ণ জায়গায় তাদের থাকতে হচ্ছে।’

পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মো. হোসাইন শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলে এখানে পানি জমে যায়। আমাদের চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেন। আমাদের পাশে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটা সম্পন্ন হলে আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে।’

সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি

ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা এএসআই হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বৃষ্টি আসলে আমাদের এখানে পানি উঠে যায়। প্রায় দুই মাস ধরে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে আর বৃষ্টি হলে পানি উঠে যাচ্ছে। প্রতিবার পানি কমতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। আমাদের এসপি স্যার এসে দেখে গেছেন। তিনি রেলওয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা লিখিতভাবেও আবেদন জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে থাকার পরিবেশ নেই। পানির কারণে আমাদের সমস্ত কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের থাকা-খাওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাবারের পানি পাওয়া যায় না। পোশাক পড়ে ডিউটিতে যেতে পারি না। পাশে একটা বিল্ডিং হচ্ছে। বিল্ডিংয়ের কার্যক্রম শেষ হলে আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে। তখন এই সমস্যাটা থাকবে না।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা অনেক পুরাতন ভবন। এটা ভেঙে ফেলা হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখে গেছেন। নতুন করে স্টেশনের পাশে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এটার কাজ চলমান রয়েছে। সে ভবনের কাজ শেষ হলে তাদের সেখানে শিফট করা হবে। তখন আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না। সব স্টাফরাই ভালোভাবে থাকতে পারবেন।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/আরএইচ/এমএস

Read Entire Article