সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম ভিত্তি

1 month ago 12

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান আমাদের জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম মূল ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বিজয়া পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সাম্প্রদায়িক বিভেদ প্রতিহতের আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য পরিণত হোক এমন এক প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্যমতে, যার ওপর ভর করে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ বা স্তম্ভ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রকৃত অর্থে নিজ নিজ স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়।’

ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয় তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘ধর্ম আমাদের উদারতা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও সহিষ্ণুতা শিক্ষা দেয়। আবার ধর্মের অপব্যাখ্যাই অনেক সময় মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। তাই ধর্মের মানবিক শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের বৈষম্যহীন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বাংলার ইতিহাস মূলত সৌহার্দ্য সম্প্রীতির ইতিহাস। সেই আবহমান কাল থেকে এই ভূখণ্ডের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। উৎসব, তা যে ধর্মেরিই হোক না কেন, আমাদের একাত্মতার প্রতীক। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভেদের দেয়ালগুলোকে সম্প্রীতির বন্ধনে রূপান্তরিত করার মধ্যেই মানবজাতির মুক্তির পথ নিহিত।’

আইনজীবীদের উদ্দেশ্য প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিচার বিভাগের মূল লক্ষ দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আমি জানি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনারা সচেষ্ট আছেন। তারপরও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজের অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব অবদান রাখতে হবে। সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমরা যে যার অবস্থান থেকে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রতিহত করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবো।’

ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার কোনো বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সবার অধিকার।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা চিন্তা করি, জুলাই অভ্যুত্থানের কথা চিন্তা করি, তখন আমরা ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে থেকে চিন্তা করি, সবাইকে বাংলাদেশি মনে করি। সেই জায়গা থেকে গুটি কয়েক মানুষের উসকানিতে যদি আমরা বাংলাদেশকে অশান্ত করতে চাই, তাহলে আগুন যেখানেই লাগুক না কেন, কারো দেবালয়, কারো মসজিদ, কারো মন্দির, কারো ঘর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না।’

নব্বইয়ের গণআন্দোলনের কথা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দুই দশক যেতে পারেনি, আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের বুকে কীভাবে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসার জন্য দুই হাজারেরও বেশি তরুণ তুর্কিকে বুকের রক্ত দিতে হয়েছে।’ কোনো আইনজীবীকে আদালতে তার পেশা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যে বা যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে ফৌজদারী অপরাধ। যারা এটা করে তারা অপরাধী। আইনজীবীরা হচ্ছেন সামাজিক নেতা। আইনজীবীদের সামাজিক নেতৃত্ব দিতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা-বৈষম্য রোধে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিজয়া পুনর্মিলনী ও বাণী অর্চনা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী। এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন চাঁদপুরে শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচ/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article