আজ ১৯ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সালমান শাহর ৫৪তম জন্মদিন। নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই সিনেমায় ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিল তার। প্রতিভা দিয়ে তিনি জয় করেছিলেন সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয়। তাইতো মৃত্যুর ২৯ বছর পর আজও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক বিস্ময়, এক প্রজন্মের আবেগ। প্রতিভার পাশাপাশি তিনি ফ্যাশনে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন।
তার মতো এমন স্টাইলিশ নায়ক বাংলাদেশে আর আসেনি। তার স্টাইল ছিল সময়ের চেয়ে আধুনিক ও অনুকরণীয়, যা তাকে বাংলা ছবির স্টাইল আইকন হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। আজও তিনি স্বপ্নের রাজকুমারের মতো জায়গা করে আছেন বাংলা ছবির দর্শকের হৃদয়ে। সালমানের ফ্যাশন আর ড্রেসিং সেন্স দেখলে মনে হয়, একটা মানুষ সময়ের চেয়ে এতটা এগিয়ে ফ্যাশনেবল কীভাবে হতে পারেন। এই ফ্যাশনই তাকে করেছে অমর। হয়েছেন তরুণদের ফ্যাশন আইকন হয়েছেন।
তার ফ্যাশন সেন্স ও স্টাইল
সালমান শাহ যে কোনো পোশাকে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন এবং তার পোশাক-পরিচ্ছদ, চুলের স্টাইল দর্শকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। প্রথম সিনেমা থেকে তিনি সবার নজর কেড়েছিলেন। রোমান্টিক নায়ক থেকে কখনো রাজনৈতিক নেতা, কখনো পাগল, কিংবা ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয়ের সময়ে পোশাকে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন। যার কারণে তিনি সবার ঘরের ছেলেতে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়া তার নিজের স্টাইল ও ফ্যাশন সচেতনতা দিয়েই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শিক্ষিত তরুণদের সিনেমামুখী করতে পেরেছিলেন।
ক্যাজুয়াল কিংবা ফরমাল সব পোশাকে মানিয়ে যেত। মানে, তিনি যাই পরেছেন তাই হয়েছে স্টাইল। দেখা গেছে, সেই সময়ে কোনো সিনেমায় মাথায় কাপড় বেঁধেছেন সেটাই পাড়া-মহল্লার তরুণদের স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পর্দায় শেরওয়ানি, পাগড়ি, পাঞ্জাবির পাশাপাশি হ্যাট ও লম্বা কোট, স্যুট-টাই যা পরেছেন তাই হয়েছে সেই সময়ের স্টাইল।
তার ব্যাকব্রাশ চুল, বাহারি সব সানগ্লাসের কালেকশন, কানের দুল, রংবেরঙের টুপি, নিত্যনতুন জুতা আর কেডস, ডান হাতে ঘড়ি পরা, মাথায় ব্যান্ডেনা পরা, চোখে লেন্স পরা, লাল কিংবা কালো নকশায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রচলিত স্কার্ফ (হাজি রুমাল) সবই তাকে করেছে স্টাইলিশ।
আকারে বড় শার্ট গুঁজে রেখে প্যান্টের এক পাশে স্টাইল করা, কিংবা পলো–শার্টের হাতা ভাঁজ করে পরা তো সালমান শিখিয়েছেন। ফেড জিনস পরে হাঁটুতে রুমাল বাধা, কখনো শার্টের কলার উঠিয়ে কিংবা হাফহাতা গেঞ্জি, জিনস ওপরের দিকে ভাঁজ করা বিচিত্র সব লুক ছিল সালমানের নিজস্ব সিগনেচার স্টাইল, যা এর আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি।
শেষের দিকে মাথার সামনের দিকের চুল পরে যাচ্ছিল বলে, পেছনের চুল লম্বা করে ঝুঁটি করে আলাদা একটা স্টাইল তৈরি করে নিয়ে ছিলেন।
উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের অভিনেতারা সালমানের আর্কাইভ ঘেঁটে তার স্টাইল অনুসরণ করেন। মজার ব্যাপার হলো, তার সময়ের তরুণেরা সালমান হতে চাইতেন, তার স্টাইল দেখে বর্তমান প্রজন্মের তরুণেরাও সালমান হতে চায়।
সময়ের আগের ফ্যাশন সেন্স তাকে জনপ্রিয় করেছে
তার পোশাকের ধারণা ছিল একেবারেই সাধারণ আর ছিমছাম। ডেনিম স্টাইল, লেদারের জ্যাকেট, প্রিন্টেড শার্ট। এগুলো এখনকার তরুণদের ফ্যাশন। আধুনিক হয়েছে সবকিছু, পোশাকের ধারায় এসেছে পরিবর্তন। কিন্তু এই তার পোশাকগুলো হয়তো যুগের পর যুগ আধুনিকই থেকে গেছে । এছাড়া সালমানের সেই সময়ে পোশাকের কাট আর রঙের মিশ্রণও বর্তমান সময়ের রেট্রো বা ভিনটেজ ট্রেন্ডের সঙ্গে দারুণ মানানসই।
এসএকেওয়াই/এএসএম