ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক করে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে। বৈঠক শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে কমিশন একমত হয়েছে। জানিয়েছে যে আগে থেকে এ নিয়ে কাজ করছে। সিইসি সৌহার্দ্য পরিবেশে আলোচনা করে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, “শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আপনার সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন।” আমরাও কথা দিয়েছি যে নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে চাই।’
পলাশ কান্তি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর এসে দেখলাম বাসাবাড়ি, মঠ-মন্দির ভাঙচুর হয়েছে- এ ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতি যেন না হয় সে বিষয়ে সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সিইসি নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, “এবার কেউ আপনাদের অত্যাচার করতে পারবে না। আমরা শক্তভাবে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”’
হিন্দু মহাজোটের শঙ্কা কথা তুলে ধরে নির্বাহী মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ভয়ে জায়গাটা অমূলক নয়। দুটি সময় আমরা খুব উদ্বিগ্ন অবস্থায় থাকি- দুর্গাপূজা আর নির্বাচন। নির্বাচন কখনও হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সুখকর ছিল না। স্থানীয় সরকার ও সংসদ, প্রতিটি নির্বাচনের আগে-পরে, প্রতিটি সরকারের সময় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হানা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কমিশন বলেছে, অপরাধীরা এবার পার পাবে না।’
নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার কঠোরভাবে অপরাধীদের দমনের আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে মহাজোটের মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে ইসির ভাবনা পুরোপুরি মিলে গেছে বলে জানানো হয়েছে। সিইসি আশ্বস্ত করেছেন, এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং নিরাপত্তা নিয়ে বাসায় ফিরবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে শক্তভাবে ব্যবস্থা নেবে ইসি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও স্থাপনায় আঘাত হানলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তভাবে ব্যবস্থা নেবে।’
আরও পড়ুন
জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছে ইসি
সিসি ক্যামেরা থাকা ভোটকেন্দ্রের তালিকা চাইলো ইসি
অনিয়ম হলে পুরো নির্বাচনি এলাকার ফল বাতিল করতে পারবে ইসি
‘কেউ যদি কোনো প্রকার ঝামেলার চেষ্টা করে, তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত করে তাদের রাজনৈতিক বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা করা হয়। অতীতেও তা দেখেছি। এ বিষয়টা যেন আগামীতে না হয় সেটা সিইসিকে বলেছি,’ যোগ করেন মুখপাত্র।
পলাশ কান্তি বলেন, ‘এবারের ভোটে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হবে, এ বিষয়টা উদ্বেগের সঙ্গে সিইসিকে জানালে তিনি সব ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। সিইসি বলেছেন, এবারের দুর্গাপূজা অত্যন্ত সুন্দরভাবে হয়েছে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেখানে যে নিরাপত্তা বলয় ছিল, তারচেয়ে বেশি নিরাপত্তা এবার ভোটে দেওয়া হবে।’
যত দাবি মহাজোটের
• ভোটের ১০ দিন আগে ও ভোটের ১০ দিন পর পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়ি ও মঠ-মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার।
• ভোটে সেনা মোতায়েন।
• ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচার ও সমাবেশ না করা।
• ভোটের প্রচারে ধর্মের ব্যবহার না করা।
• হামলা হলে সেই আসনের ভোট স্থগিত ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
• সংখ্যালঘু ও নারী ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল করা।
• ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ও আসার জন্য নির্বিঘ্ন ব্যবস্থা করা।
প্রতিবন্ধীদের সহায়তা
জাতীয় নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও সহায়তায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি। নির্বাচন ভবনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় এ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। এসময় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির প্রস্তুতি চলছে। এ জন্য ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে।
এমওএস/একিউএফ/জিকেএস

2 hours ago
3









English (US) ·