বাংলাদেশে চায়ের দোকান বা আড্ডার আসরের সাধারণ দৃশ্য — কেউ সিগারেট ধরাচ্ছেন, আবার কেউ ছোট কৌটা থেকে জর্দা তুলে গালে রাখছেন। অনেকের ধারণা, ধোঁয়া টানা সিগারেটই বেশি ক্ষতিকর, জর্দা তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু চিকিৎসক ও গবেষণার তথ্য বলছে – এটি একটি বিপজ্জনক ধারনা।
সিগারেট আর জর্দা—দুটোই তামাকজাত দ্রব্য, আর দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। জেনে নিন কোনটা শরীরের কতোটা ক্ষতি করতে পারে-
সিগারেটের ঝুঁকি
ধূমপান করলে শরীরে প্রায় ৭ হাজারের বেশি রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করে, যার মধ্যে অন্তত ৬৯ ধরনের কেমিক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপানের কারণে শুধু ফুসফুসের ক্যান্সার নয়, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) সহ নানা জটিল রোগ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে এই সংখ্যা বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪৪০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন তামাকের কারণে।
জর্দার ঝুঁকি
জর্দা বা অন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকও কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। অনেকেই ভাবেন, ধোঁয়া শরীরে ঢুকছে না বলে জর্দা তেমন ক্ষতি করে না। বাস্তবে এটি আরও ভয়ংকর হতে পারে।
গবেষণা বলছে, নিয়মিত জর্দা বা সাদাপাতার মতো ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মুখগহ্বরের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার, দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ, এমনকি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মুখগহ্বরের ক্যান্সারের প্রধান কারণ জর্দা ও সাদাপাতা জাতীয় তামাক ব্যবহার।
আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো — ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের রক্তে নিকোটিনের মাত্রা অনেক সময় ধূমপায়ীদের চেয়েও বেশি হয়। ফলে আসক্তি আরও গভীর হয় এবং শরীরে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনে।
কোনটি বেশি ক্ষতিকর?
এই দুটি আসক্তির মধ্যে আসলে তুলনা করাই কঠিন। সিগারেট ও জর্দা — দুটো ভিন্ন পথে শরীরকে একই পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। সিগারেট ধূমপানের মাধ্যমে ফুসফুসকে দ্রুত নষ্ট করে, আর জর্দা চুপিসারে নষ্ট করে মুখ, দাঁত, মাড়ি ও রক্তনালী। শেষ পর্যন্ত দুটোই মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
সমাধান কোথায়?
চিকিৎসকরা বলছেন, তামাকজাত দ্রব্যের কোনো ‘নিরাপদ বিকল্প’ নেই। একমাত্র সমাধান হলো সিগারেট, বিড়ি, জর্দা — সবকিছু একেবারে বাদ দেওয়া। প্রাথমিকভাবে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, কাউন্সেলিং বা চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করে ধীরে ধীরে তামাক ত্যাগ করা সম্ভব।
অর্থাৎ, সিগারেট ও জর্দা দুটোই প্রায় সমান ক্ষতিকর। বরং জর্দার ক্ষতি অনেক সময় মানুষ টেরই পান না, তাই সচেতনতা আরও জরুরি।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল, আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি, ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফর্মেশন, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন
এএমপি/জিকেএস