সিগারেটের বদলে ভ্যাপ হার্টের জন্য সুখবর নয়

সিগারেট যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, তা এখন আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই অনেকেই সিগারেট ছাড়ার পর ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটকে নিরাপদ বিকল্প মনে করে ব্যবহার শুরু করেন।  কিন্তু নতুন একটি বড় গবেষণা জানাচ্ছে, এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। বরং সিগারেট ছেড়ে ভ্যাপিং শুরু করলেও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে না— অনেক ক্ষেত্রে আরও বেড়ে যায়। ভারতের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) নেতৃত্বে করা এই গবেষণার তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। গবেষকরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভ্যাপিং কোনোভাবেই হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ বিকল্প নয়। আইসিএমআরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ পরিচালিত এই মেটা-অ্যানালিসিসে বিশ্বের ১২টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল BMC Public Health-এ। গবেষণার মূল ফলাফলগুলো হলো— ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ৫৩ শতাংশ বেশি প্রচলিত সিগারেটের প্রভাব বাদ দিলেও ভ্যাপ ব্যবহারকারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি থাকে যারা সিগারেট না ছেড়ে ভ্যাপিং শুরু করেছেন, তাদের হার্ট অ্

সিগারেটের বদলে ভ্যাপ হার্টের জন্য সুখবর নয়

সিগারেট যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, তা এখন আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই অনেকেই সিগারেট ছাড়ার পর ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটকে নিরাপদ বিকল্প মনে করে ব্যবহার শুরু করেন। 

কিন্তু নতুন একটি বড় গবেষণা জানাচ্ছে, এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। বরং সিগারেট ছেড়ে ভ্যাপিং শুরু করলেও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে না— অনেক ক্ষেত্রে আরও বেড়ে যায়।

ভারতের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) নেতৃত্বে করা এই গবেষণার তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। গবেষকরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভ্যাপিং কোনোভাবেই হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ বিকল্প নয়।

আইসিএমআরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ পরিচালিত এই মেটা-অ্যানালিসিসে বিশ্বের ১২টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল BMC Public Health-এ।

গবেষণার মূল ফলাফলগুলো হলো—

ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ৫৩ শতাংশ বেশি

প্রচলিত সিগারেটের প্রভাব বাদ দিলেও ভ্যাপ ব্যবহারকারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি থাকে

যারা সিগারেট না ছেড়ে ভ্যাপিং শুরু করেছেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

সব ধরনের নিকোটিন পুরোপুরি ছাড়াদের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি

একই ধরনের ঝুঁকি স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে

এই তথ্যগুলো প্রমাণ করে যে, ভ্যাপিং হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়— এমন ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

কেন ভ্যাপিং হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-সিগারেটে ধোঁয়া না থাকলেও এতে থাকা নিকোটিনই আসল বিপদ। নিকোটিন—

হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়ায়

রক্তনালির স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে

রক্ত জমাটবাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়

বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ও আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির গবেষণাতেও দেখা গেছে, নিয়মিত ভ্যাপিং রক্তনালির ক্ষতি করে এবং ভবিষ্যতে হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

সিগারেট + ভ্যাপিং = আরও বেশি ঝুঁকি

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যারা একসঙ্গে সিগারেট ও ই-সিগারেট ব্যবহার করেন— যাদের বলা হয় ‘ডুয়াল ইউজার’— তাদের ক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া যায়নি।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই দ্বৈত ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?

গবেষকরা মনে করছেন, এই ফলাফল ভারতের ২০১৯ সালের ই-সিগারেট নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে আরও শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। তাদের মতে, ভ্যাপিংকে ধূমপান ছাড়ার উপায় হিসেবে তুলে ধরা একটি বিপজ্জনক ‘হার্ম-রিডাকশন ফাঁদ’। এতে মানুষ সিগারেট ছাড়লেও নিকোটিনের আসক্তি থেকে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে না।

তাহলে ধূমপান ছাড়ার নিরাপদ উপায় কী?

বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট পরামর্শ—

ভ্যাপিং বা অন্য কোনো নিকোটিন বিকল্পে না গিয়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কাউন্সেলিং এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমোদিত ওষুধ বা থেরাপি ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ। হৃদযন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে সব ধরনের নিকোটিন পণ্য পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়াই এখনো একমাত্র নিরাপদ ও কার্যকর উপায়। সিগারেট ছেড়ে ভ্যাপে যাওয়াকে সমাধান ভাবলে, ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যায়, বরং কখনো কখনো আরও বেড়ে যায়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow