সিটি করপোরেশনের ঘোষণায় আনন্দে ভাসছে সাভারবাসী

8 hours ago 1

সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে নতুন প্রশাসনিক রূপ পাচ্ছে সাভার ও কেরানীগঞ্জ। সাভার পৌরসভা ও আশুলিয়া মিলে গঠিত হচ্ছে ‘সাভার সিটি করপোরেশন’, আর কেরানীগঞ্জকে উন্নীত করা হচ্ছে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার প্রক্রিয়ায়। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় আনন্দে ভাসছে সাভারবাসী।

গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফের সই করা এক পত্রে প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানা গেছে।

সাভার উপজেলার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানা নিয়ে গঠিত হবে সাভার সিটি করপোরেশন। বর্তমানে দেশে ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে- ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ। সাভার সিটি করপোরেশন হলে এটি হবে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন।

এছাড়া দেশে বর্তমানে ৩৩০টি পৌরসভা আছে। কেরানীগঞ্জ পৌরসভা হলে সেটি হবে ৩৩১তম পৌরসভা।

সাভার সিটি করপোরেশনের ঘোষণা ঘিরে আনন্দে ভাসছে সাভারবাসী। অনেকেই মিষ্টিমুখ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে। তবে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্যও করছেন।

তবে সামগ্রিকভাবে সাভারবাসী সিটি করপোরেশন ঘোষণায় খুশি। যদিও কর বৃদ্ধিসহ নাগরিক সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে, সবচেয়ে বেশি আপত্তি ওয়াসার পানিকে ঘিরে।

সিটি করপোরেশন হলে সাভার আরও উন্নত হবে জানিয়ে নাজমা আক্তার নামে পৌর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, আমরা ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার করতে পারবো না। ওয়াসামুক্ত সিটি করপোরেশন চাই।

নাজমার মত একই সুর স্থানীয়দের। তারা জানান, সিটি করপোরেশন হলে সমস্যা নেই। কিন্তু সাভারের পানিই আমরা পান করবো। ওয়াসার পানি পান করবো না।

আশুলিয়া ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবাসন ব্যবসায়ী মো. রুবেল মন্ডল বলেন, সিটি করপোরেশন হলে একটা সামগ্রিক উন্নয়ন হবে তা আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু ইউনিয়নের চেয়ে সিটি করপোরেশন বাড়তি কর যেমন হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি আরোপ করবে, এতে সাধারণ মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বাড়তে পারে।

ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়ন মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমরা যারা পৌরসভায় বসবাস করি নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নাই, তবে সিটি করপোরেশন হলে নাগরিক সুবিধা বাড়বে এটা নিশ্চিত। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে যেসব পদক্ষের নেওয়া দরকার তা সবার আগে নিতে হবে। একটা সিটি করপোরেশন ঘোষণা করলেন জনগণের কাঁধে ট্যাক্সের বোঝা চাপবে কিন্তু নাগরিক সুবিধা পাবে না এমন সিটি করপোরেশন আমারা আশা করতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা সাভারের পানি খেয়ে অভ্যস্ত। সিটি করপোরেশন হলে আমরা ওয়াসাকে স্বাগত জানাতে পারি না। আমরা ওয়াসামুক্ত সিটি করপোরেশন চাই। আমরা সাভারের যে পানি পান করে অভ্যস্ত সাভারবাসী যেন সেই পানিই পান করতে পারে।

সাভার পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছামছুদ্দিন বলেন, সাভার সিটি করপোরেশন হলে নাগরিক সেবার ওপর কোনো প্রভাব পরবে না। তবে সিটি করপোরেশন হলে শত শত কোটি টাকার বিদেশি যে সব প্রজেক্ট আছে সেগুলোর আওতায় আসবে।

ওয়াসার পানির বিষয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার পরে মেয়র ও কাউন্সিলররা যদি মনে করেন ওয়াসার পানি সাভারবাসী প্রয়োজন তাহলে নিবে আর তারা না চাইলে নেবে না।

আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ননিবাসী ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান মোহন বলেন, সাভার আশুলিয়াকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করার দলীয় কোনো নির্দেশনা অথবা দলীয় কোনো মতামত আমরা এখনও পাইনি। তবে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে বলতে পারি, সিটি করপোরেশন হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে, জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন হবে। এলাকার উন্নয়নের জন্য বড় বড় বাজেট আসবে, এগুলো অবশ্যই আমরা সাদরে গ্রহণ করব। এটা আমাদের জন্য ভালো।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অনেকে আইন মানতে চান না, পরিবেশকে অবজ্ঞা করে আমাদের খাল বিল নদী-নালাতে ইটিপি ছাড়াই প্রচুর ময়লা আবর্জনা ফেলছে। এইসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে করপোরেশন দরকার, ক্ষমতা দরকার এবং ভবিষ্যতে সরকারের আগ্রহ দরকার। যেন এই পুরো এলাকার উন্নয়নটা ভারসাম্যপূর্ণ হয়। করপোরেশনে তাকে নাগরিক সুবিধা দিতে গেলে কর বাড়াতে হবে, আবার কর বাড়াতে গেলে তার সঠিক ব্যয়টা প্রয়োজন। এজন্য সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার।

স্থানীয়রা বলছেন, পৌরসভা থাকায় সাভারে যানজট, জলাবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং নাগরিক সেবার ঘাটতি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা, রাজস্ব আদায়ে ধস, অকার্যকর নাগরিক সেবা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং আর্থিক অব্যবস্থাপনা এর মূল কারণ। তবে সিটি করপোরেশন হলে এসব সমস্যা থেকে সাভারবাসী পরিত্রাণ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকারি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র এবং জনসংখ্যার চাপ মিলিয়ে সাভার এখন এক বিশাল নগর এলাকায় পরিণত হয়েছে। পৌরসভার সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নাগরিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, আশুলিয়া অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টস শিল্প, শ্রমিকবসতি এবং আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে পরিকল্পিত নগরায়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা, নিরাপদ পানি সরবরাহ কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণের মতো নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার সক্ষমতাও নেই। ফলে আশুলিয়া এলাকার জনগণ যানজট, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

এনএইচআর/এমএস

Read Entire Article