বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে পদত্যাগ করে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বর্তমানে তিনি মিত্র দেশ রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাকে আশ্রয় দেওয়ার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশন ডেকেছে রাশিয়া।
সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা ক্রান্তিকালীন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হয়েছে রাশিয়া। তারা নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছে। আজ সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।
রুশ কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ার রাজনৈতিক সমাধানে আলোচনার জন্য এ অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছে। এ সময় তারা সব পক্ষকে রাজনৈতিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তরের আহ্বান জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনামলে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করে আসছে রাশিয়া। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো বাচেগা এক বিশ্লেষণে বলেন, ২০১১ সালে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নৃশংসভাবে দমন করার কারণে আসাদকে সিরিয়ার মানুষ চিরকাল মনে রাখবে। কারণ, এরপরই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই যুদ্ধে ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়। এ ছাড়া আরও ৬০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী হয়।
তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে বাশার বিদ্রোহ গুঁড়িয়ে দিয়ে এতদিন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। রাশিয়া তার প্রতাপশালী বিমানবাহিনী ব্যবহার করেছে, ইরান সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। আর প্রতিবেশী লেবাননের হিজবুল্লাহ সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের প্রশিক্ষিত যোদ্ধা পাঠিয়েছে আসাদ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য। মূলত এ তিন শক্তিশালী মিত্রের সহযোগিতার কারণে ২০১১ সালের বিদ্রোহ সামাল দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছিলেন বাশার।
তিনি আরও বলেন, এবার মিত্রদের তেমন কোনো সহায়তাই পায়নি আসাদ সরকার। কারণ মিত্ররা তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়েই ব্যস্ত এখন। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর সেখানে যুদ্ধ করছে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে গত বছর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়, যা এখনো চলছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানেরও পাল্টাপাল্টি কিছু হামলা হয়েছে। এরপর ইরান ইসরায়েলকে মোকাবিলা করা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সিরিয়ায় নতুন সংঘাতে সরাসরি জড়াতে চায়নি। মিত্রদের সহায়তা না পাওয়ায় ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যত কোথাও কোথাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি আসাদের সেনারা। আবার কোথাও কোথাও বাধা না দিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।
গত সপ্তাহে বিদ্রোহী বাহিনী কোনো রকম প্রতিরোধের মুখে না পড়েই প্রথমে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী আলেপ্পো দখল করে নেয়। তারপর হামা এবং কয়েক দিন পর হোমস নগরী দখল করে নেওয়ায় রাজধানী দামেস্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দামেস্ক দখল করে নিতে তাদের বেগ পেতে হয়নি। বিদ্রোহী যোদ্ধারা দামেস্কে ঢোকার সময়ই ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এর মধ্য দিয়ে আসাদ পরিবারের ৫ দশকের শাসনের ইতি ঘটে।