সিরিয়ার নতুন সরকারের পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

3 hours ago 2

সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যা দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, পরিবহন এবং ব্যাংকিং খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। খবর আরব নিউজ।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর, পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং সিরিয়ার জন্য নতুন ধরনের পন্থা গ্রহণে ইউরোপীয় নেতারা প্রস্তুত হয়েছেন। 

আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে এবং এই পটভূমিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিরিয়ার নতুন পরিস্থিতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞাগুলি পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে।

নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নতুন পদক্ষেপ 

ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিরিয়ার ওপর আরোপিত জ্বালানি খাতের বিধিনিষেধ, যা তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খাতে প্রভাব ফেলেছিল, তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়ায় পরিবহন খাতের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিবহন ও সংযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করবে।

এ ছাড়া সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এর আর্থিক কার্যক্রমের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সিরিয়ার মানবিক সহায়তা ত্বরান্বিত করার জন্য, জব্দকৃত অর্থের ওপর অস্থায়ী ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা মানবিক সরবরাহ, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা এবং পুনর্গঠন কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে।

বাকি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত 

এ ছাড়া সিরিয়ার ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা এখনও অব্যাহত থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞাগুলি বজায় রেখেছে, যার মধ্যে অস্ত্র ব্যবসা, সামরিক এবং বেসামরিক ব্যবহারের জন্য দ্বৈত পণ্য এবং সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর পাশাপাশি, নজরদারি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।

সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট 

প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকে সিরিয়া একটি গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়েছিল। গৃহযুদ্ধটি পরবর্তীতে বিশাল আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে পরিণত হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষের জীবনহানি এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ শরণার্থী হয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালে ইইউ সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে, যা মূলত আসাদ সরকারের কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করতে উদ্দেশ্য ছিল।

তবে, আসাদ সরকারের পতন না হলেও গত ডিসেম্বরে হায়াত তাহরির আল-শামের গোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাত করার পর সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ইউরোপীয় নেতারা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসেন। নতুন সরকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিরিয়ায় আংশিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হবে।

এখনও পর্যবেক্ষণ অব্যাহত  

ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তারা নজর রাখবে। তারা নিশ্চিত করেছেন যে, যদি সিরিয়ার নতুন সরকার দেশটির রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে না চলে, তবে তারা আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত। এই সিদ্ধান্তটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পিত পদক্ষেপগুলোর অংশ, যা সিরিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন অর্জনে সহায়তা করতে চায়।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা 

ইইউ সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন অর্জন করতে আগ্রহী, তবে তা নির্ভর করছে নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজের ওপর। সিরিয়ার পরিস্থিতি উন্নতি হলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারে এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে পূর্ণাঙ্গ পুনঃপ্রবেশের সুযোগ দিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইইউয়ের এই পদক্ষেপ সিরিয়ার ওপর চাপ কমাতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে, এই পরিবর্তনগুলো কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন সিরিয়ার নতুন সরকার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করবে এবং রাজনৈতিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ নেবে।

Read Entire Article