সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্লাস্টিক দ্রব্য নিয়ে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউনিডোর যৌথ উদ্যোগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরিবেশ সংরক্ষণে টেকসই প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার নিয়ে আলোচনা সভা ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাপ্রোচ টুয়ার্ডস সাসটেইনেবল প্লাস্টিকস ইউজ অ্যান্ড মেরিন লিটারিং প্রিভেনশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসরে এ আলোচনা ও ক্লিন-আপ (পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত কর্মসূচি) অনুষ্ঠিত হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারুণ্যের আনন্দ-উচ্ছল পরিবেশে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বীর শহীদদের প্রতিকৃতি ও নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয় বাণী শোভিত এই ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেট ভক্তদের উপস্থিতিতে এই মনোজ্ঞ আলোচনা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর স্থানীয় রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সংগঠনের ৩৫ ছাত্র-ছাত্রী ও পরিবেশকর্মীদের এই মিলনমেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার।
বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ইউনিডোর জাতীয় বিশেষজ্ঞ এসএম আরাফাত, ইউনিডোর প্রধান প্রকল্প সমন্বয়ক সত্য ভট্টাচার্য্য, ক্রিকেটার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেব ব্রত পাল, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আকলিম আবেদীন এবং সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা প্রমুখ।
‘ইউনিডো’র জাতীয় বিশেষজ্ঞ এসএম আরাফাত তার স্বাগত ভাষণে বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের চ্যালেঞ্জ আজ কেবল বাংলাদেশেরই পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নয়। এটি আজ বিশাল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ‘ইউনিডো’ যৌথ উদ্যোগে ও নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় দেশে ৬০টি পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও নাগরিক সচেতনতা অভিযান পরিচালনা করছে। সিলেটে আজকের এই কর্মসূচি সেই পরিবেশগত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিরই একটি অংশ।
তিনি প্লাস্টিক দূষণ প্রশমনে 3R উদ্যোগের (রিডিউজ, রি-ইউজ, রি-সাইকেল) মতো টেকসই উদ্যোগের কথা পুনঃ উল্লেখ করে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পলিথিন সামগ্রী ব্যবহার ও দূষণের গুরুত্বারোপ করে বলেন, এসব দ্রব্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায় না বলে কেউ এগুলো সংগ্রহ করে না।
তিনি আরও বলেন, পুনঃব্যবহার যোগ্য এবং পুনঃপ্রক্রিয়াযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করলে প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমে আসবে। এসব সামগ্রী সংগ্রহ করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আজ ক্রিকেট অঙ্গনে সিলেটে এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো পরিবেশ সচেতনতা এবং জনসাধারণকে দূষণের বিপক্ষে উদ্বুদ্ধ করা, বিশেষ করে তারুণ্যের শক্তি দিয়ে পরিবেশ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা।
‘ইউনিডো’র জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক মি. সত্য ভট্টাচার্য্য দেশে ইউনিডো-পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘২য় পর্যায়ে আমরা প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করব যাতে তারা প্লাস্টিককে এমন কোনো ক্ষতিকর দ্রব্য বা রসায়ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন যা প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদ জগৎ, মাটি, পানি ও বাতাসে দূষণের কারণ হতে না পারে। আমাদের আরও লক্ষ্য হলো কার্বনের মাত্রা হ্রাস করা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আকলিম আবেদীন সংক্ষিপ্ত ভাষণে সম্প্রতি যুব দিবসে পরিচ্ছন্নতা উদ্যোগে সিলেটে জৈন্তিয়া খাল বর্জ্যমুক্ত করার সফল দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, আমাদের তরুণ যুবকরা দেশের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। তাদের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে, যাতে দূষণের বিষময় পরিণতির কথা তাদের হৃদয় মননে অনুপ্রবিষ্ট করা যায়। তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে সারা দেশ।
সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, প্রধান অতিথি ফেরদৌস আনোয়ার তার ভাষণে বলেন, পরিচ্ছন্নতা একটি মনোস্তাত্ত্বিক অভ্যাস। দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার অপরিহার্যতাকে আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। মন্দ দৃষ্টান্ত দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমাদের একটা অভ্যাস হলো, নিজের অকর্মণ্যতা ও অসচেতনতার ভার অন্যের ওপর চাপানো। আমাদের উচিত নিজেকে প্রশ্ন করা, পরিবেশের জন্য আমি নিজে কি করছি। তারপর সচেতন করতে হবে পরিবার-পরিজনকে এবং তারপর সমাজের অন্য সবাইকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটার কল্যাণ সমিতির সম্পাদক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সমিতির সদস্য ও ম্যাচ রেফারি দেব ব্রত পাল বিশেষ অতিথির ভাষণে টেকসই প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, অপচনশীল প্লাস্টিক ও পলিথিন আমাদের জীবন ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ একটি হুমকিস্বরূপ। দূষণের ফলে হাঁপানি, অ্যালার্জি, থাইরয়েড এমনকি প্রাণঘাতি ক্যান্সারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের বর্জ্য জাহাজে করে নিয়ে এসে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে। ফলে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণ চক্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের জনগণ তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের রয়েছে প্রাণ শক্তি, অদম্য দেশপ্রেম সাহসিকতা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা। তারা অসাম্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হয়েছে। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও উন্মুক্ত স্থান থেকে এদিন স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিদিনের মতো আজও অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করেন।