সীমান্তে জীবন সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেই কেবল মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালকের (ডিজি) দালজিৎ সিং চৌধুরীর এমন মন্তব্যে দ্বিমত জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিজি মেজর মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে পিলখানাস্থ বিজিবি সদরদপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফ কী ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৫ জন বিএসএফ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন অনুপ্রবেশকারীদের ধারাল অস্ত্রের হামলায়। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা প্রথমে সতর্ক করে বাধা দেয় এবং শেষ পদক্ষেপ হিসেবে গুলি ছোড়া হয়।’
তার এমন মন্তব্যের পরে তাৎক্ষণিক দ্বিমত পোষণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একজন অল্প বয়সী বাংলাদেশি নাগরিককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। ওই শিশুটি বর্ডার নিরাপত্তার জস্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’
যদিও এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন বিএসএফ ডিজি।
তবে সীমান্ত হত্যা নিয়ে সার্বিকভাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘এটা নিয়ে এবার সীমান্ত সম্মেলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের বেলায় টহল জোরদার করে সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয়পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে প্রেষণা প্রদান এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।’
এবারের সন্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব পায় পুশ-ব্যাক ও পুশ-ইনের বিষয়টিও। এই প্রসঙ্গে দালজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে পুশব্যাক ইন করানো হচ্ছে। শুধু যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম মেনে পুশইন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫৫০ জনকে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, এ-সংক্রান্ত দুই হাজার ৪০০ কেস যাচাই প্রক্রিয়া চলছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন সহযোগিতা করছে।’
পুশ-ইনের নামে কেন ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে বিএসএফ? এ ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিকদেরও বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা আইনের মধ্য থেকে যথাযথ চ্যানেলে পুশইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। যদি এমন (ভারতীয় রোহিঙ্গা, নাগরিক) কোনো ঘটনা ঘটে থাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জানানো হলে ভারত তাদের সহযোগিতা করবে।’
বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ৪ দিনব্যাপী (২৫-২৮ আগস্ট) মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে রাজধানী ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে শুরু হয়।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন।
অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরী, আইপিএসের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আজই ভারতীয় প্রতিনিধিদল ভারতে প্রত্যাগমন করার কথা রয়েছে। সমাপনী সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা।