সীমান্তবর্তী স্কুল দেখতে দর্শনার্থীদের স্রোত

2 days ago 14

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম চরভিটায় গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমধর্মী এক পাঠশালা। চরভিটার আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগোলে ভারতের সীমান্তে দেখা মেলে চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

শিশুদের শিক্ষার জন্য বই-পুস্তক ও শিক্ষাগুরুর পাশাপাশি কোন পরিবেশে তারা পড়াশোনা করছে সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হওয়ার অন্যতম কারণ এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

২০০০ সালে বকুয়ার বহরমপুর বাজারে ছিল এরফান আলীর চা-নাশতার দোকান। পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিনে দু-তিনবার করে তিনি চা দিয়ে আসতেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা এরফানের স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার।

২০০১ সালে ছেলের স্বপ্নের কথা শুনে নিজের জমির ৩৩ শতাংশ জায়গা পরিষ্কার করে খড়-বাঁশের তিনটি স্কুলঘর বানান বাবা নুরুল ইসলাম। ২০০৮ সালে স্নাতক পাসের পর ২০১১ সালে তার দায়িত্ব নেন এরফান আলী। সে বছরই পাঠদানের অনুমতি পেয়ে যায় বিদ্যালয়টি। মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা স্কুলটিতে ষোলো বছরের মাথায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা একদম শূন্যে চলে আসে এবং এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত আছে। ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টির জাতীয়করণের ঘোষণার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সরকারি বেতন।

২০১৭ সালের ২৪ জুলাই হরিপুর উপজেলায় ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়া রোধে অসামান্য অবদান স্বরূপ চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়। ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে হরিপুর উপজেলার চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্কুলটি দেখতে আসা তরিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এই স্কুল শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, দেশের গর্ব। আমরা প্রায়ই আসি। এখানে এসে আমাদের খুব ভালো লাগে। আনসারুল হক নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমি এই স্কুলে এবারই প্রথম এসেছি। এসেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য আমার বেশ ভালো লেগেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে সারা দেশে এই স্কুলটি বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বিদ্যালয়টি ২০০১ সালে স্থাপিত হয়ে পাঠদান শুরু করে। ২০১১ সালে পাঠদানের অনুমতি পাই এবং ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ধরে রাখতে ও ঝরে পড়া রোধে আমি ২০১১ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ে মিড-ডে-মিল চালু করি, যা এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে। ২০২৩ সালে গুণী শিক্ষক হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদক অর্জন করেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী।

তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালে ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের জন্য বিদ্যালয় সংলগ্ন নিজস্ব জমিতে তৈরি করা হয়েছে একটি শিশু পার্ক। ছাত্রছাত্রীদের বিনোদন ও মানসিক বিকাশে শিশু পার্কে রয়েছে হাতি, জিরাফ, ফুলের বাগান, ব্রিজ, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড। প্রতি বছর বিশেষ করে দুই ঈদে দেশি-বিদেশি পর্যটক এই স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন। ভবিষ্যতে স্কুল সংলগ্ন পার্কটি সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

হরিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুলতান সালাউদ্দিন কালবেলাকে জানান, চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একেবারে মফস্বলে অবস্থিত। এটি একটি দেশসেরা স্কুল। এই স্কুলটি সবার কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

Read Entire Article